আসালামুয়ালাইকুম ,
আমার নাম ফারজানা, আমি একজন বিবাহিত নারী। আমার সংসার জীবনের প্রায় এই নয় মাস। আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে আমার পালিয়ে বিয়ে করতে হয়েছে, তার সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল ৫ বছর। তবে এখন কেমন যেনো আমার জীবনটা অগোছালো হয়ে যাচ্ছে।
আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে তার বাসায় বিয়ে করে আসার পর তার ফ্যামিলি মেনে নেয় কিন্তু তাদের চিন্তাধারার সঙ্গে আমার মিলছে না। কারণ আমার শাশুড়ি তার মেয়ে কেই বেশি প্রাধান্য দেয়।
শশুর বাসায় আসার পর প্রথম প্রথম সব ঠিক ছিল তবে মাঝে মধ্যে আমার হাজবেন্ডের সাথে টুক টুক ঝগড়া হতো। তবে একদিন রাতে আমার হাজবেন্ডের সঙ্গে আমার ঝগড়া হয় আর আমার হাজব্যান্ড আমাকে প্রথমবার গালে একটা থাপ্পর দিয়ে বসে। আমি এটা নিয়ে কিছু বলিনি। এমন কয়েকবার সে আমাকে থাপ্পর দিত তবে পরে আবার নিজেই আসে সরি বলতো কান্না করত। সে আমাকে সব কিছু দেয় যা তার সাধ্যের মধ্যে। মন খারাপ হলে ঘুরতে নিয়ে যায় তবে একটা বিষয় হলো সে আমাকে পড়াশুনা করতে দিতে চায় না। সেই ইন্টার এর পর আমাকে বলেছিল আর পড়তে পারব না । আমি তবু তার থাকে লুকিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েছি তবে ফাইনাল পরীক্ষার আগে তার সাথে চলে আসি আর তাকে কিছুই জানায়নি।
তারপর সে আমাকে আমার বাবার বাসায় গিয়ে ১ টা রাত ও থাকতে দিতে চায় না। এখন আমার পরিবার বলতাসে যে পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে কিন্তু আমার হাজবেন্ডের সামনে এসব বলতেই আমার ভয় লাগে কারণ সে অনেক রাগি।
আমি পালিয়ে আসার পর আমার বাসা থাকে প্রায় ৪ মাস পর আমার সাথে যোগাযোগ করে, আর আস্তে আস্তে আমি আর আমার হাজব্যান্ড আমাদের বাসায় যাওয়া আসা করতে থাকি, আমার আম্মু চায় আমি নিজের পায়ে দাড়াই , যেটা আমার হাজবেন্ডের পছন্দ না।
এখন আমাকে যদি পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হয় আমাকে আমার বাবার বাসায় চলে যেতে হবে। আর আমার হাজব্যান্ড বলসে যে আমাকে যদি আমার বাবার বাসায় গিয়ে ১ রাতও কাটাতে হয় তাহলে তাকে সারাজীবনের জন্য ছেড়ে দিয়ে যেতে হবে।
এখন আমি কি করবো আমাকে প্লিজ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করুন। আমি এই নিয়ে খুব মানসিক যন্ত্রণায় আছি।
পরামর্শঃ
ফারজানা,
আপনার প্রশ্নের জন্য ধন্যবাদ। আপনার পরিস্থিতি এবং মানসিক যন্ত্রণা সম্পর্কে শুনে আমি খুবই দুঃখিত। এখানে কিছু পরামর্শ দিলাম যা আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
সম্পর্কের মূল্যায়ন
1. সংলাপ এবং যোগাযোগ: আপনার স্বামীর সাথে খোলামেলা আলোচনা করুন। আপনার পড়াশোনা এবং আপনার পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে তাকে জানাতে হবে। তার চিন্তাভাবনা এবং অনুভূতিগুলি বোঝার চেষ্টা করুন এবং আপনার অনুভূতিগুলি সৎভাবে প্রকাশ করুন।
2. বিশ্বাস এবং সম্মান: আপনার স্বামীর সাথে আপনার সম্পর্কটি বিশ্বাস এবং সম্মানের ভিত্তিতে গড়ে তুলুন। কোনো সম্পর্কেই শারীরিক নির্যাতন গ্রহণযোগ্য নয়। তাকে জানিয়ে দিন যে তার আচরণ আপনার জন্য কষ্টকর এবং এটি অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
পড়াশোনা এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন
1. পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া: আপনার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া এবং ব্যক্তিগত উন্নয়ন আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি আপনার স্বাবলম্বীতা এবং আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। আপনার স্বামীর সাথে এই বিষয়টি আলোচনা করুন এবং তাকে বোঝান কেন এটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
2. পরিবারের সমর্থন: আপনার পরিবারের সমর্থন আপনার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। আপনার মায়ের ইচ্ছা আপনার ব্যক্তিগত উন্নয়নের জন্য এবং এটি আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভালো।
সম্ভাব্য পদক্ষেপ
1. নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা: যদি আপনার স্বামীর আচরণ আপনার জন্য শারীরিক বা মানসিকভাবে ক্ষতিকর হয়, তাহলে আপনার নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রথমে নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনে আপনার পরিবারের সাথে থাকুন এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করুন।
2. বিকল্প সমাধান: যদি আপনার স্বামী আপনার পড়াশোনার প্রতি আপত্তি করে তবে আপনি আপনার পড়াশোনা এবং সম্পর্কের মধ্যে একটি সমঝোতা খুঁজে পেতে পারেন। যেমন, আপনি আপনার পড়াশোনার সময়সূচী তার সাথে আলোচনা করতে পারেন এবং এমন সময় নির্বাচন করতে পারেন যা আপনাদের উভয়ের জন্য সুবিধাজনক।
3. পেশাদার পরামর্শ: পেশাদার কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করুন। একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্টের সাথে আলোচনা করলে আপনি আপনার সমস্যা এবং সমাধান সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং মানসিক সমর্থন পাবেন।
ফারজানা, আপনার মানসিক এবং শারীরিক সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করুন এবং প্রয়োজনে সাহায্য নিন। আমি আপনার পাশে আছি এবং আপনার মঙ্গল কামনা করছি।
শুভকামনা,
রাজু আকন
কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট
#স্বামীর_সাথে_সম্পর্ক #পারিবারিক_সমস্যা #বিবাহিত_জীবন #মানসিক_স্বাস্থ্য #কাউন্সেলিং #পারিবারিক_সহিংসতা #নারীর_অধিকার #সম্পর্ক_পরামর্শ #সঠিক_পদক্ষেপ #পড়াশোনা_ও_ব্যক্তিগত_উন্নয়ন #রাজু_আকন #বাংলা_ব্লগ