জর্ডানে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলছে। অনেক মানুষ অর্থনৈতিক চাপে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন, যা উদ্বেগ, হতাশা, অনিদ্রা এবং আত্মবিশ্বাসের অভাব সৃষ্টি করতে পারে। তবে সঠিক মানসিক কৌশল ও অভ্যাস গড়ে তুললে এই কঠিন সময়েও নিজের মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
১. মানসিক চাপে সচেতনতা গড়ে তুলুন
অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে মানসিক চাপ বাড়তে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই মানসিক চাপে ভুগছেন কিনা, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। উদ্বেগ, ঘুমের সমস্যা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, মনোযোগের অভাব, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
কিভাবে সচেতনতা বাড়াবেন?
- প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট নিজের মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করুন।
- কোন কোন ঘটনা বা পরিস্থিতি আপনার মানসিক চাপ বাড়াচ্ছে, তা লিখে রাখুন।
- নিজের অনুভূতি ও চিন্তা সম্পর্কে পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে কথা বলুন।
- প্রয়োজন হলে পেশাদার কাউন্সেলিং গ্রহণ করুন।
২. বাস্তবসম্মত বাজেট পরিকল্পনা করুন
অর্থনৈতিক চাপ কমাতে সুপরিকল্পিত বাজেটিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আয়ের তুলনায় খরচ নিয়ন্ত্রণ না থাকলে অর্থনৈতিক সংকট আরও তীব্র হয়ে ওঠে, যা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তাই আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ব্যয়ের পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ।
বাজেট পরিকল্পনার উপায়:
- মাসিক আয়ের একটি তালিকা তৈরি করুন।
- অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যয় নির্ধারণ করুন।
- দৈনন্দিন ও মাসিক খরচ পর্যবেক্ষণের জন্য মোবাইল অ্যাপ বা নোটবুক ব্যবহার করুন।
- সঞ্চয় করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- জরুরি পরিস্থিতির জন্য একটি ইমার্জেন্সি ফান্ড তৈরি করুন।
৩. মানসিক সমর্থন খুঁজুন
পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে আপনার অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো শেয়ার করুন। সমস্যাগুলো একা মোকাবিলা করতে গেলে মানসিক চাপ আরও বেড়ে যেতে পারে। কারো সাথে কথা বললে এক ধরনের মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায় এবং সমাধানের নতুন পথ খুঁজে পাওয়া যায়।
মানসিক সমর্থন পাওয়ার উপায়:
- পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনদের সাথে খোলাখুলি কথা বলুন।
- সহায়ক সামাজিক গোষ্ঠীতে যুক্ত হোন।
- মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর কাজ করা কমিউনিটি বা অনলাইন গ্রুপে অংশগ্রহণ করুন।
- পেশাদার কাউন্সেলিং গ্রহণ করুন।
৪. শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখুন
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য একে অপরের সাথে জড়িত। শরীর সুস্থ না থাকলে মানসিক চাপ আরও বেড়ে যায়। তাই নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার উপায়:
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন (৬-৮ ঘণ্টা)।
- স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খান।
- অতিরিক্ত ক্যাফেইন ও প্রসেসড ফুড পরিহার করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
৫. মানসিক চাপ কমানোর কৌশল অনুশীলন করুন
মানসিক চাপ কমানোর জন্য কিছু কার্যকর কৌশল আছে, যা প্রতিদিনের জীবনে প্রয়োগ করা গেলে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা সম্ভব।
চাপ কমানোর কার্যকর কৌশল:
- মেডিটেশন ও ধ্যান: প্রতিদিন অন্তত ১০-১৫ মিনিট মেডিটেশন করুন।
- শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়ার অভ্যাস করুন।
- সৃজনশীল কার্যকলাপ: ছবি আঁকা, গান শোনা, বই পড়া বা যেকোনো সৃজনশীল কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
- স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ: অন্যকে সাহায্য করলে মানসিক চাপ কমে এবং আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়।
৬. পেশাদার মানসিক সহায়তা নিন
যদি অর্থনৈতিক চাপ আপনার মানসিক স্বাস্থ্যে বড় সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে পেশাদার কাউন্সেলিং নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাউন্সেলিং আপনাকে মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে এবং ইতিবাচক জীবনযাত্রা গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
আমি, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট রাজু আকন, অনলাইনে মানসিক স্বাস্থ্য কাউন্সেলিং সেবা প্রদান করি, যা যেকোনো স্থান থেকে গোপনীয়তার সাথে গ্রহণ করা যায়।
অনলাইন সুরক্ষিত ও গোপনীয় কাউন্সেলিং সেবা পেতে ভিজিট করুন rajuakon.com/contact।
অর্থনৈতিক চাপ কঠিন হলেও, সঠিক পরিকল্পনা ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় অনুসরণ করে এটি মোকাবিলা করা সম্ভব। পরিবার, বন্ধু এবং পেশাদারদের সাহায্য গ্রহণ করে নিজের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করুন। ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস এবং কাউন্সেলিং গ্রহণের মাধ্যমে আপনি মানসিক চাপ মুক্ত থাকতে পারেন।