যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি দম্পতিদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব দিন দিন বাড়ছে। এই সমস্যা একাধিক কারণের মাধ্যমে সৃষ্টি হচ্ছে এবং এর প্রভাব সরাসরি তাদের পারিবারিক জীবন এবং মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করছে। প্রবাসী জীবনে নতুন পরিবেশ, সাংস্কৃতিক পরিবর্তন, আর্থিক চাপ, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, এসব বিষয় দম্পতিদের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা এবং দূরত্ব তৈরি করতে পারে। আসুন, আমরা জানি কেন UK-তে বাংলাদেশি দম্পতিদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ছে এবং কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
১. সংস্কৃতিগত পার্থক্য
বাংলাদেশি দম্পতিরা যখন UK-তে বসবাস করতে আসেন, তখন তাদের মধ্যে সাংস্কৃতিক পার্থক্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। একদিকে পিতামাতার পুরনো চিন্তা-ধারা এবং অপরদিকে নতুন প্রজন্মের আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি, এই সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বের কারণে অনেক সময় সম্পর্কের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পুরনো চিন্তা-ধারা এবং ব্রিটিশ সমাজের আধুনিকতা নিয়ে একে অপরের মধ্যে মতবিরোধ হতে পারে, যার ফলে সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়।
২. অর্থনৈতিক চাপ
ব্রিটেনে বসবাসের জন্য জীবনযাত্রার খরচ অনেক বেশি এবং প্রবাসী দম্পতিরা অনেক সময় অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে পড়েন। অর্থনৈতিক সমস্যা, চাকরির নিরাপত্তাহীনতা, এবং কম আয় এসব নিয়ে দম্পতির মধ্যে অনিবার্যভাবে উত্তেজনা এবং অশান্তি হতে পারে। অনেক সময়, অর্থনৈতিক চাপ ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, যা দম্পতিদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়।
৩. সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
UK-তে এসে অনেক বাংলাদেশি দম্পতি সামাজিক বিচ্ছিন্নতার শিকার হন। সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি না করতে পারা, ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, এবং নতুন দেশে মানিয়ে না ওঠার ফলে দম্পতিরা নিজেদের মধ্যে একাকীত্ব অনুভব করতে পারেন। একে অপরের সাথে সময় কাটানোর পরিবর্তে, তারা নিজেদের ভেতরের একাকীত্ব বা হতাশার মধ্যে ডুবে যেতে পারেন, যার ফলে সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়।
৪. বাচ্চাদের মেন্টালিটি এবং সাফল্যের চাপ
ব্রিটেনে আসা অনেক বাংলাদেশি দম্পতির জন্য, তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে মানসিকভাবে গড়ে তোলা এবং সফল হতে সহায়তা করা একটি বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানদের শিক্ষা এবং সাফল্য নিয়ে দম্পতিদের মধ্যে অনেক সময় চাপ থাকে। একে অপরের ওপর দায়িত্বের চাপ পড়ে এবং তাদের নিজেদের সম্পর্কের প্রতি মনোযোগ কমে যায়, যার ফলে সম্পর্কের মধ্যে ফাঁক তৈরি হয়।
৫. ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা
বাঙালি দম্পতিদের মধ্যে অনেক সময় ভাষাগত সমস্যার কারণে একে অপরের অনুভূতি বুঝতে সমস্যা হতে পারে। যদিও অনেকেই ইংরেজি জানেন, তবে তাদের মাঝে ইংরেজিতে সম্পূর্ণভাবে সাবলীলতা না থাকা তাদের মধ্যে সম্পর্কের সমস্যা তৈরি করতে পারে। একে অপরের অনুভূতিগুলো সঠিকভাবে প্রকাশ না করতে পারার কারণে মানসিক দূরত্ব সৃষ্টি হয় এবং সম্পর্কের মধ্যে টানাপোড়েন দেখা দেয়।
৬. পারিবারিক চাপ এবং পিতামাতার প্রত্যাশা
বাংলাদেশি দম্পতিদের মধ্যে, বিশেষ করে যারা নতুন দেশে এসেছেন, তাদের মাঝে তাদের পরিবারের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য সৃষ্টি হতে পারে। পিতামাতার উচ্চ প্রত্যাশা, যা সন্তানের প্রতি থাকে, অনেক সময় দম্পতিদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে। একে অপরকে পুরোপুরি বুঝতে না পারা, সংসারের দুশ্চিন্তা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝি এবং বাড়ির সদস্যদের সাথে সম্পর্কের চাপ সৃষ্টির কারণে সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব বাড়ে।
৭. মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা
UK-তে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশি দম্পতি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সম্মুখীন হন, যেমন স্ট্রেস, ডিপ্রেশন, এবং উদ্বেগ। এই মানসিক চাপ তাদের একে অপরের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দেয় এবং সম্পর্কের মধ্যে অবিচ্ছিন্ন দূরত্ব তৈরি করে। প্রবাসে একাকীত্ব, পারিবারিক সমস্যা এবং সাংস্কৃতিক অস্থিরতা তাদের মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে তারা একে অপরকে সঠিকভাবে সমর্থন দিতে পারেন না।
সমাধান: কীভাবে সম্পর্কের দূরত্ব কমানো সম্ভব?
- খোলামেলা যোগাযোগ: দম্পতির মধ্যে খোলামেলা এবং সৎ যোগাযোগ সম্পর্কের মধ্যে দুরত্ব কমাতে সাহায্য করতে পারে। নিজেদের অনুভূতি এবং উদ্বেগ একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- পারস্পরিক সমর্থন: প্রবাসী জীবন অনেক সময় চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, তাই একে অপরকে মানসিকভাবে সমর্থন করা গুরুত্বপূর্ণ। একে অপরকে সঠিকভাবে বোঝার চেষ্টা করলে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হতে পারে।
- সামাজিক সম্পর্ক গঠন: পরিবারের বাইরে সামাজিক নেটওয়ার্ক তৈরি করা এবং একে অপরের সহায়তায় কাজ করা সম্পর্ককে আরও গভীর করতে সাহায্য করে। স্থানীয় কমিউনিটি বা বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।
- মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা গ্রহণ: দম্পতির মধ্যে মানসিক চাপ বা উদ্বেগ থাকলে, পেশাদার কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করা উচিত। আমি, রাজু আকন (কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট), আপনাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। আপনি rajuakon.com/contact-এ যোগাযোগ করে সেবা নিতে পারেন।
- সাংস্কৃতিক সংযোগ: নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে, এবং ব্রিটিশ সমাজের সঙ্গে মানিয়ে চলার জন্য নিজেদের মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরি করতে হবে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন: শারীরিক সুস্থতা সম্পর্কের মানসিক অবস্থাকেও প্রভাবিত করে। নিয়মিত ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, এবং পর্যাপ্ত ঘুম দম্পতির মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ব্রিটেনে বসবাসরত বাংলাদেশি দম্পতিদের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে, তবে সম্পর্কের দৃঢ়তা বজায় রাখার জন্য সচেতন প্রচেষ্টা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। খোলামেলা যোগাযোগ, পারস্পরিক সমর্থন, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা গ্রহণের মাধ্যমে এই দূরত্ব কমানো সম্ভব। আমি, রাজু আকন (কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট), আপনাকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। আপনি rajuakon.com/contact-এ যোগাযোগ করে যে কোনও সময় সহায়তা নিতে পারেন।