সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) বিশ্বের অন্যতম বড় প্রবাসী শ্রমিক গন্তব্য, যেখানে লাখো বাংলাদেশি শ্রমিক কাজ করছেন। UAE-তে কাজের পরিবেশ অনেক সময় চাপের হতে পারে, বিশেষত যখন শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ বা ওভারটাইম করতে বলা হয়। ওভারটাইম কাজের জন্য প্রলোভন থাকে, কারণ এটি অতিরিক্ত অর্থ উপার্জনের সুযোগ তৈরি করে, কিন্তু এটি মানসিক চাপ এবং শারীরিক পরিশ্রমের কারণে একাধিক মানসিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা যে কাজের পরিবেশে থাকেন, সেখানে দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, শারীরিক ক্লান্তি এবং অতিরিক্ত মানসিক চাপ তাদের মানসিক সুস্থতার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব, UAE-তে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ওভারটাইম এবং মানসিক চাপ সম্পর্কিত কিছু চ্যালেঞ্জ এবং সেগুলি মোকাবিলার উপায়।
১. ওভারটাইম এবং মানসিক চাপের সম্পর্ক
১.১ অতিরিক্ত কাজের চাপ
UAE-তে প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রায়ই অতিরিক্ত কাজ বা ওভারটাইম করার জন্য বলা হয়। যদিও এটি অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করে, তবে এটি মানসিক চাপ এবং শারীরিক ক্লান্তির সৃষ্টি করতে পারে। দীর্ঘ সময় কাজ করা, বিশ্রামের অভাব এবং অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম তাদের মানসিক সুস্থতার ওপর প্রভাব ফেলে। শারীরিক ক্লান্তির কারণে মানসিক অস্থিরতা এবং উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়, যা কর্মক্ষমতা এবং মনোযোগ কমিয়ে দেয়।
১.২ পারিবারিক জীবনে প্রভাব
ওভারটাইম কাজের কারণে প্রবাসী শ্রমিকদের পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ কমে যায়। পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং দীর্ঘ সময় কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকার কারণে একাকীত্ব, সম্পর্কের মধ্যে দূরত্ব, এবং মানসিক চাপ বৃদ্ধি পায়। সন্তানদের প্রতি অভিভাবকের দায়িত্ব পালন বা পারিবারিক সুস্থতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হতে পারে, যা মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
১.৩ বিকল্পের অভাব
UAE-তে কিছু শ্রমিক কাজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশ্রাম নিতে পারেন না, বিশেষত যখন তারা ওভারটাইমে কাজ করেন। বিশ্রামের অভাব এবং দীর্ঘ সময় কাজ করার ফলে শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা হুমকির মুখে পড়ে। এই অভাবজনিত চাপ দীর্ঘমেয়াদে মানসিক অস্থিরতা, বিষণ্ণতা, এবং উদ্বেগ সৃষ্টি করতে পারে।
২. ওভারটাইম এবং মানসিক চাপ মোকাবিলা করার উপায়
২.১ কাজের সময় ব্যবস্থাপনা
ওভারটাইমের ক্ষেত্রে, প্রবাসী শ্রমিকদের উচিত নিজেদের কাজের সময় সঠিকভাবে পরিচালনা করা। তাদের উচিত দিনের কাজের পরে কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়া, যাতে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা যায়। প্রতিদিনের কাজের সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত বিরতি এবং বিশ্রামের ব্যবস্থা করা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে।
২.২ শারীরিক ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম
ওভারটাইমের পর শারীরিক ব্যায়াম এবং যোগব্যায়াম করা মানসিক চাপ কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। ব্যায়াম শরীরের এন্ডোরফিন (হ্যাপি হরমোন) মুক্তি ঘটিয়ে মনের শান্তি এবং শরীরের শক্তি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। UAE-তে প্রবাসী শ্রমিকরা যোগব্যায়াম বা নিয়মিত হাঁটা বা দৌড়ানোর মতো ব্যায়াম করতে পারেন, যা তাদের মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করবে।
২.৩ পারিবারিক সমর্থন এবং সম্পর্কের উন্নতি
ওভারটাইমের কারণে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সুযোগ কমে গেলে, শ্রমিকদের উচিত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখা। ভিডিও কল, ফোন কল বা অন্যান্য যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহার করে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করা উচিত। পরিবারের সমর্থন মানসিক চাপ কমাতে এবং একাকীত্ব কাটাতে সহায়ক হতে পারে।
২.৪ ভাষাগত দক্ষতা উন্নয়ন
অনেক সময়, প্রবাসী শ্রমিকদের মানসিক চাপের কারণ হলো ভাষাগত প্রতিবন্ধকতা, যা কাজের পরিবেশে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের উচিত স্থানীয় ভাষা বা ইংরেজি ভাষা শিখে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করা, যাতে তারা তাদের কাজের বিষয়ে সঠিকভাবে বুঝতে পারে এবং অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারে। ভাষাগত দক্ষতা মানসিক চাপ কমাতে এবং সঠিক নির্দেশনা পেতে সহায়ক হতে পারে।
২.৫ মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা এবং কাউন্সেলিং সেবা
চাকরির চাপ এবং ওভারটাইমের কারণে যদি মানসিক চাপ বেড়ে যায়, তবে পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। rajuakon.com/contact থেকে অনলাইনে কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ করা যেতে পারে, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক হতে পারে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একে অপরকে সাহায্য করতে এবং উদ্বেগ কমাতে গোপনীয়ভাবে সহায়তা করতে সক্ষম।
২.৬ সামাজিক সমর্থন তৈরি করা
প্রবাসী শ্রমিকদের উচিত স্থানীয় কমিউনিটিতে অংশগ্রহণ করে সামাজিক সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা। একে অপরকে সমর্থন এবং উৎসাহ দেওয়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। UAE-তে অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা তাদের মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
২.৭ ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখা
ওভারটাইম কাজ করার পর, মানসিক চাপ কমানোর জন্য ইতিবাচক চিন্তা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যে কাজটি আপনি করছেন, তাতে আপনার অবদান এবং সাফল্য সম্পর্কে ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলা প্রয়োজন। এটি মানসিক চাপ কমাতে এবং কাজের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করতে সহায়ক হতে পারে।
৩. সন্তোষজনক বিশ্রাম এবং ঘুম
বেশি ওভারটাইমের কারণে বিশ্রামের অভাব দেখা দেয়, যা মানসিক চাপ বাড়াতে পারে। সঠিক ঘুম এবং বিশ্রাম নিশ্চিত করা শ্রমিকদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। প্রচুর বিশ্রাম নেওয়া এবং রাতের ঘুমের সময়ের মধ্যে বাধা সৃষ্টি না হওয়া মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
UAE-তে প্রবাসী শ্রমিকদের ওভারটাইম এবং মানসিক চাপ একটি সাধারণ সমস্যা, তবে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব। কাজের সময় ব্যবস্থাপনা, শারীরিক ব্যায়াম, পরিবার এবং সামাজিক সমর্থন, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো এবং সুস্থ কর্মজীবন বজায় রাখা যেতে পারে। প্রবাসী শ্রমিকদের উচিত সঠিক সহায়তা গ্রহণ করা এবং নিজেদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সচেতন হওয়া।