গলার ভিতরে গোটা বা গলায় চাকা অনুভব করা অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। এটি সাধারণত সংক্রমণ, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া বা থাইরয়েডের সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয়। কিছু ক্ষেত্রে এটি সাধারণ ও নিরীহ হলেও, কিছু সময়ে এটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। তাই এর কারণ ও সমাধান জানা গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগে আমরা গলার ভিতরে গোটা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ, লক্ষণ, চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করবো।
গলার ভিতরে গোটা হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
১. লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া (Swollen Lymph Nodes)
শরীরে কোনো সংক্রমণ হলে লিম্ফ নোড ফুলে যেতে পারে, যা গলার এক বা দুই পাশে গোটা অনুভব করায়।
প্রধান কারণ:
- ঠান্ডা, ফ্লু বা ভাইরাল সংক্রমণ
- ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন (যেমন, টনসিলাইটিস)
- দাঁত বা মাড়ির সংক্রমণ
২. টনসিলাইটিস (Tonsillitis)
গলার ভিতরের টনসিল ফুলে গেলে ছোট বা বড় আকারের গোটা অনুভূত হতে পারে।
প্রধান কারণ:
- ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
- ঠান্ডা লাগা বা অ্যালার্জি
৩. থাইরয়েড গ্ল্যান্ড বড় হয়ে যাওয়া (Goiter বা Thyroid Nodules)
থাইরয়েড গ্রন্থি যদি বড় হয়ে যায় বা এতে নডিউল (ছোট গোটা) তৈরি হয়, তাহলে গলার সামনের অংশে গোটা দেখা যেতে পারে।
প্রধান কারণ:
- আয়োডিনের অভাব
- থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
৪. সিস্ট বা পুঁজযুক্ত ফোঁড়া (Cyst বা Abscess)
গলার টিস্যুতে সিস্ট বা পুঁজযুক্ত ফোঁড়া হলে গোটা হতে পারে। এটি নরম ও ব্যথাযুক্ত হতে পারে।
প্রধান কারণ:
- সংক্রমণ
- জন্মগত গঠনজনিত সমস্যা
৫. ল্যারিংজাইটিস (Laryngitis) বা গলার প্রদাহ
ভোকাল কর্ড বা গলার প্রদাহ হলে ফোলা ভাব অনুভূত হতে পারে, যা গোটা বলে মনে হয়।
প্রধান কারণ:
- বেশি চিৎকার বা কথা বলা
- ভাইরাসজনিত সংক্রমণ
৬. গলার টিউমার বা ক্যান্সার (Neck Tumor or Throat Cancer)
যদি গলার গোটা দীর্ঘদিন স্থায়ী থাকে, ব্যথা না হয়, এবং এটি ধীরে ধীরে বড় হয়, তাহলে এটি টিউমার বা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
প্রধান কারণ:
- ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণ
- হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (HPV) সংক্রমণ
গলার ভিতরে গোটা হওয়ার লক্ষণ
গলার ভিতরে গোটা হলে নিচের লক্ষণগুলো দেখা যেতে পারে:
- গলার এক বা দুই পাশে ফোলা অনুভূত হওয়া
- ব্যথা বা অস্বস্তি
- কথা বলতে বা গিলতে কষ্ট হওয়া
- গলার শুষ্কতা বা খুসখুসে কাশি
- জ্বর বা সংক্রমণের লক্ষণ
- দীর্ঘদিন ধরে গোটা থাকলে ওজন কমে যাওয়া
গলার ভিতরে গোটা হলে করণীয়
১. বাসায় ঘরোয়া সমাধান
- গরম পানির গার্গল: লবণ মিশ্রিত গরম পানি দিয়ে গার্গল করলে গলার ফোলা ও ব্যথা কমে।
- হালকা গরম পানি পান করুন: এটি গলার অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে।
- মধু ও আদার মিশ্রণ: মধু ও আদার রস মিশিয়ে খেলে প্রদাহ কমে।
২. ওষুধ ও চিকিৎসা
- সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক (ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী) গ্রহণ করুন।
- ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন খাওয়া যেতে পারে।
- দীর্ঘস্থায়ী বা বড় গোটা হলে থাইরয়েড পরীক্ষা করানো প্রয়োজন।
৩. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি কবে?
নিচের লক্ষণগুলোর মধ্যে যদি কোনোটি দেখা যায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- ২ সপ্তাহের বেশি সময় ধরে গোটা থাকলে
- গোটার আকার ধীরে ধীরে বড় হলে
- গিলতে কষ্ট হলে
- ওজন দ্রুত কমে গেলে
- গোটা থেকে রক্তপাত হলে
গলার ভিতরে গোটা প্রতিরোধের উপায়
- সঠিক পরিমাণে পানি পান করুন – গলা আর্দ্র রাখা জরুরি।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান – ভিটামিন সি, আয়োডিন ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন।
- ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকুন – এটি গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
- সংক্রমণ হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন – ঠান্ডা, ফ্লু বা টনসিল সংক্রমণ হলে অবহেলা করবেন না।
উপসংহার
গলার ভিতরে গোটা হওয়া অনেক কারণে হতে পারে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এটি নিরীহ ও সংক্রমণজনিত। ঘরোয়া পরিচর্যা ও প্রাথমিক চিকিৎসায় এটি ভালো হয়ে যায়। তবে যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ধীরে ধীরে বড় হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও সঠিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এই সমস্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।