গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মায়ের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। খেজুর একটি প্রাকৃতিকভাবে পুষ্টিসমৃদ্ধ ফল, যা গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে মায়েদের জন্য বিশেষ উপকারী। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি, ফাইবার, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টিগুণ মায়ের শক্তি বাড়াতে এবং শিশুর সুস্থ বিকাশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে।
এই নিবন্ধে গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা, সঠিক পরিমাণ ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার ১০টি উপকারিতা
১. প্রাকৃতিক শক্তিবর্ধক
গর্ভকালীন সময়ে শরীরে অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়। খেজুর প্রাকৃতিক শর্করার (গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ) একটি উৎকৃষ্ট উৎস, যা তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাতে সাহায্য করে এবং গর্ভবতী মায়ের ক্লান্তিভাব দূর করে।
২. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
গর্ভাবস্থায় প্রজেস্টেরন হরমোনের কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে, যা হজমপ্রক্রিয়া উন্নত করে এবং অন্ত্রের গতিশীলতা বাড়িয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক।
৩. রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সহায়তা
গর্ভবতী নারীদের শরীরে পর্যাপ্ত আয়রন থাকা জরুরি, কারণ রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। খেজুরে প্রাকৃতিক আয়রন থাকে, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৪. শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠন উন্নত করে
খেজুরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে, যা শিশুর হাড় ও দাঁতের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৫. গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপ একটি সাধারণ সমস্যা, যা প্রি-এক্ল্যাম্পসিয়া ও অন্যান্য জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। খেজুরে পটাসিয়াম বেশি থাকায় এটি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
৬. গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করে
যদিও খেজুরে প্রাকৃতিক চিনি থাকে, তবে এটি লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সমৃদ্ধ একটি খাবার, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ায় না। ফলে এটি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
৭. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমায়
গর্ভাবস্থায় ভিটামিন বি৬ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সেরোটোনিন ও ডোপামিন উৎপাদনে সহায়তা করে, যা মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে। খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক ভিটামিন বি৬ মায়ের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং ভালো ঘুম নিশ্চিত করে।
৮. প্রসব সহজ করতে সহায়তা করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে গর্ভাবস্থার শেষ দিকে নিয়মিত খেজুর খেলে সার্ভিক্স নরম হয়ে স্বাভাবিক প্রসবের সম্ভাবনা বাড়ে এবং প্রসবকালীন ব্যথা কম হয়। এটি প্রসবকালীন অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা জরায়ুর সংকোচন প্রক্রিয়াকে স্বাভাবিক করে।
৯. শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক
খেজুরে ফোলেট (ভিটামিন বি৯) থাকে, যা শিশুর স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিউরাল টিউব ডিফেক্টের ঝুঁকি কমায় এবং শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সঠিক গঠনে সহায়তা করে।
১০. বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে
গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুরে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান প্রোল্যাকটিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়াতে সাহায্য করে, যা বুকের দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক। ফলে শিশুর জন্মের পর পর্যাপ্ত দুধ সরবরাহ নিশ্চিত হয়।
গর্ভাবস্থায় কীভাবে খেজুর খাবেন?
প্রথম ও দ্বিতীয় ট্রাইমেস্টার: প্রতিদিন ২-৩টি খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
তৃতীয় ট্রাইমেস্টার: প্রতিদিন ৪-৬টি খেজুর খাওয়া প্রসব সহজ করতে সহায়ক হতে পারে।
খেজুর খাওয়ার সেরা উপায়:
সতর্কতা: কখন খেজুর খাওয়া এড়িয়ে চলবেন
✔ গর্ভবতী মা যদি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সীমিত পরিমাণে খেজুর খেতে হবে।
✔ যদি কোনো মা ওজন দ্রুত বাড়ানোর ঝুঁকিতে থাকেন, তবে খেজুরের পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখা উচিত।
✔ অতিরিক্ত খেজুর খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে, তাই নির্দিষ্ট পরিমাণ মেনে চলা ভালো।
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় খেজুর একটি অত্যন্ত উপকারী খাবার, যা মায়ের শক্তি বাড়ানো থেকে শুরু করে শিশুর বিকাশ পর্যন্ত নানা উপকারিতা প্রদান করে। এটি রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধ, হাড়ের গঠন উন্নতকরণ, কোষ্ঠকাঠিন্য কমানো এবং প্রসব সহজ করাসহ বিভিন্ন উপায়ে সহায়তা করে। তবে, প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী খেজুরের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত এবং যদি কোনো জটিলতা থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খেতে হবে।