রক্তের প্লাটিলেট (Platelet) আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ এক উপাদান যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। প্লাটিলেটের স্বাভাবিক মাত্রা প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে ১,৫০,০০০ থেকে ৪,৫০,০০০ এর মধ্যে থাকা উচিত। কিন্তু কিছু রোগ, অপুষ্টি বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যেতে পারে, যা রক্তক্ষরণ ও বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে কিছু প্রাকৃতিক ও খাদ্যাভ্যাসগত পরিবর্তন করা যেতে পারে।
রক্তের প্লাটিলেট কমে যাওয়ার কারণ
- ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা ভাইরাল জ্বর
- অটোইমিউন রোগ (যেমন ITP)
- ক্যান্সার বা কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- অপুষ্টিজনিত সমস্যা
- বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
প্লাটিলেট বৃদ্ধির প্রাকৃতিক উপায়
১. পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
(ক) আয়রন সমৃদ্ধ খাবার
আয়রন প্লাটিলেট উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- পালং শাক, মিষ্টি কুমড়া
- লাল মাংস
- ব্রকলি
(খ) ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড
ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড প্লাটিলেট বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- দুধ, ডিম, মাছ
- শিম, ডাল, কলিজা
(গ) ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
ভিটামিন সি প্লাটিলেটের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- লেবু, কমলা, পেয়ারা
- ক্যাপসিকাম, টমেটো
(ঘ) ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড
এটি রক্তের সঠিক চলাচল নিশ্চিত করে এবং প্লাটিলেট বাড়াতে সাহায্য করে।
- আখরোট, বাদাম
- মাছের তেল
২. পর্যাপ্ত পানি পান করা
শরীরে পানির অভাব হলে প্লাটিলেট উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। তাই প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
৩. অ্যালোভেরা ও তুলসী পাতার রস
অ্যালোভেরা ও তুলসী পাতার রস শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও প্লাটিলেট উৎপাদনে সহায়তা করে।
৪. পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ব্যায়াম
অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও ঘুমের অভাব প্লাটিলেট হ্রাসের কারণ হতে পারে। তাই প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো এবং হালকা ব্যায়াম করা উচিত।
৫. প্রাকৃতিক হারবাল উপাদান
- গিলয় (Giloy): এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে প্লাটিলেট বাড়াতে সহায়তা করে।
- পেঁপে পাতার রস: গবেষণায় দেখা গেছে, পেঁপে পাতার রস প্লাটিলেট বৃদ্ধি করে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ
যদি প্লাটিলেটের মাত্রা খুব কমে যায় এবং রক্তক্ষরণ বা অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কখনোই স্ব-চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত নয়।
উপসংহার
রক্তের প্লাটিলেট বৃদ্ধি করতে পুষ্টিকর খাবার, পর্যাপ্ত পানি পান, বিশ্রাম এবং প্রাকৃতিক উপাদান গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি প্লাটিলেট অত্যন্ত কমে যায়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।