নবজাতক ও ছোট বাচ্চাদের জন্য মায়ের দুধ সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার। তবে অনেক মা শুয়ে শুয়ে বাচ্চাকে দুধ খাওয়ান, যা স্বস্তিদায়ক মনে হলেও কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অনেকেই জানেন না, শুয়ে দুধ খাওয়ানোর ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট, দুধ গলায় আটকে যাওয়া, কানের ইনফেকশনসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই ব্লগে আমরা শুয়ে দুধ খাওয়ানোর ক্ষতিকর দিক, নিরাপদ পদ্ধতি ও সতর্কতাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
শুয়ে দুধ খাওয়ালে কি হয়?
শিশুকে শুয়ে দুধ খাওয়ালে নানারকম স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়। নিচে কিছু সাধারণ সমস্যা উল্লেখ করা হলো—
১. দুধ গলায় আটকে যাওয়া ও শ্বাসকষ্ট
- শুয়ে খাওয়ানোর সময় দুধ শিশুর শ্বাসনালীতে চলে যেতে পারে, যা শ্বাসকষ্ট ও দমবন্ধের ঝুঁকি বাড়ায়।
- কিছু শিশু এ থেকে হঠাৎ মৃত্যুর (Sudden Infant Death Syndrome – SIDS) ঝুঁকিতেও পড়তে পারে।
২. কানের ইনফেকশন (Ear Infection)
- শুয়ে শুয়ে দুধ খাওয়ানোর ফলে দুধ শিশুর ইউস্টেশিয়ান টিউবে (Eustachian Tube) ঢুকে যেতে পারে, যা কানে সংক্রমণ সৃষ্টি করে।
- বারবার কানের ইনফেকশন হলে শিশুর শ্রবণ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
৩. পেটের গ্যাস ও হজমের সমস্যা
- শুয়ে খাওয়ানোর ফলে শিশুর পেটে বাতাস আটকে যায়, যা পেট ব্যথা ও ফাঁপাভাব সৃষ্টি করে।
- অনেক সময় শিশুর বমি ভাব বা বমি হতে পারে।
৪. দাঁত ক্ষয় ও মুখের ইনফেকশন
- যদি শিশুর দাঁত গজাতে শুরু করে, তবে শুয়ে দুধ খাওয়ানোর ফলে মুখে ব্যাকটেরিয়া জমে দাঁত ক্ষয়ের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
- থ্রাশ (Oral Thrush) নামক ফাঙ্গাল ইনফেকশন হতে পারে, যা শিশুর মুখে সাদা দাগ তৈরি করে।
৫. শিশুর দুধ গেলার সমস্যা
- শুয়ে খাওয়ানোর ফলে শিশুর গলাধঃকরণে সমস্যা হতে পারে, কারণ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে দুধ সহজে নিচের দিকে নামতে পারে না।
- কিছু শিশু রিফ্লাক্স (Reflux) বা GERD সমস্যায় পড়ে, যা তাদের স্বাভাবিক খাওয়া ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
শুয়ে খাওয়ানোর পরিবর্তে নিরাপদ পদ্ধতি
যদি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় শুয়ে থাকার অভ্যাস থাকে, তবে কিছু নিরাপদ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে—
১. আধা-বসা অবস্থায় খাওয়ানো
- শিশুকে কোলে বসিয়ে বা আধা-শোয়া অবস্থায় খাওয়ানো ভালো।
- এতে দুধ গলায় আটকে যাওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
২. খাওয়ানোর পর বাচ্চাকে সোজা রাখা
- দুধ খাওয়ানোর পর কমপক্ষে ১৫-৩০ মিনিট ধরে শিশুকে কোলে সোজা করে রাখতে হবে, যাতে হজম ভালো হয়।
৩. মাথা উঁচু রেখে খাওয়ানো
- শুয়ে খাওয়ানোর সময় যদি বাধ্যতামূলক হয়, তবে শিশুর মাথা কিছুটা উঁচু করে খাওয়ানো উচিত, যাতে দুধ সঠিকভাবে নিচের দিকে প্রবাহিত হয়।
৪. খাওয়ানোর পর ঢেকুর তোলা
- শিশুকে খাওয়ানোর পর হালকা পিঠে চাপ দিয়ে ঢেকুর তোলানোর অভ্যাস করানো দরকার, যাতে গ্যাস বের হয়ে যায়।
শুয়ে দুধ খাওয়ানো কখন নিরাপদ হতে পারে?
কিছু ক্ষেত্রে, বিশেষ করে রাতের বেলা, মায়েরা শুয়ে শুয়ে শিশুকে দুধ খাওয়াতে চান। এমন অবস্থায় কিছু সতর্কতা মেনে চললে ঝুঁকি কিছুটা কমানো সম্ভব—
✔ শিশুর মাথা সামান্য উঁচু রাখা
✔ একপাশে কাত হয়ে শিশুকে খাওয়ানো
✔ খাওয়ানোর পর শিশুকে একপাশে কাত করে শোয়ানো
✔ খাওয়ানোর পর কিছুক্ষণ ধরে রাখা ও ঢেকুর তোলা
কখন ডাক্তার দেখানো দরকার?
যদি শুয়ে দুধ খাওয়ানোর কারণে শিশুর নীচের সমস্যা দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত—
✔ বারবার বমি বা দুধ উগরে দেওয়া
✔ শ্বাসকষ্ট বা ঘন ঘন কাশি
✔ কানে ব্যথা বা কান থেকে পুঁজ বের হওয়া
✔ বুকের জমাট কফ বা ঘনঘন হেঁচকি
✔ শিশুর ওজন না বাড়া বা খাওয়ার প্রতি অনীহা
উপসংহার
শিশুর সুস্থ বিকাশের জন্য সঠিকভাবে দুধ খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুয়ে দুধ খাওয়ালে শিশুর শ্বাসকষ্ট, কানের ইনফেকশন ও হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই শিশুকে বসে বা আধা-শোয়া অবস্থায় খাওয়ানো উত্তম। যদি শুয়ে খাওয়ানো খুবই প্রয়োজন হয়, তবে কিছু সতর্কতা মেনে চলতে হবে। শিশু সুস্থ রাখতে সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।