নারীদের মধ্যে জরায়ুর টিউমার একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন বয়সে দেখা দিতে পারে। এটি ক্যানসারজনিত বা অ-ক্যানসারজনিত হতে পারে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক লক্ষণ চিহ্নিত করা গেলে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আজকের ব্লগে জরায়ুতে টিউমারের লক্ষণ, কারণ এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
জরায়ুতে টিউমার কী?
জরায়ুর মধ্যে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি পেয়ে যদি টিউমারের সৃষ্টি করে, তবে তাকে জরায়ু টিউমার বলা হয়। এটি দুই ধরনের হতে পারে—
✅ সৌম্য (Benign) টিউমার: যা ক্যানসারজনিত নয়, যেমন ফাইব্রয়েড বা পলিপ।
✅ ক্যানসারজনিত (Malignant) টিউমার: যা জরায়ু ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
জরায়ুর টিউমার সাধারণত ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
জরায়ুতে টিউমারের লক্ষণ
প্রাথমিক পর্যায়ে টিউমারের লক্ষণ বোঝা কঠিন হতে পারে, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
১. অনিয়মিত মাসিক বা অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ
👉 স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে মাসিক চলা
👉 মাসিকের রক্তের রঙ বা পরিমাণে পরিবর্তন
👉 মাসিকের মধ্যে বা সহবাসের পর রক্তপাত
২. তলপেটে ব্যথা বা ভারী অনুভূতি
👉 জরায়ুর টিউমার হলে পেটের নিচের অংশে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে
👉 বিশেষ করে দীর্ঘ সময় বসে থাকলে বা ভারী কাজ করলে ব্যথা বাড়তে পারে
৩. প্রস্রাবে সমস্যা
👉 ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া
👉 প্রস্রাব আটকে যাওয়ার অনুভূতি
👉 প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগে সমস্যা
👉 টিউমারের কারণে অন্ত্রে চাপ পড়তে পারে, ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে
👉 দীর্ঘসময় মলত্যাগের সমস্যা থাকলে সতর্ক হওয়া জরুরি
৫. পেট ফুলে যাওয়া বা ওজন বৃদ্ধি
👉 টিউমারের আকার বড় হলে পেট ফুলে যেতে পারে
👉 ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে
৬. গর্ভধারণে সমস্যা বা বন্ধ্যাত্ব
👉 জরায়ুর টিউমার থাকলে গর্ভধারণে জটিলতা দেখা দিতে পারে
👉 গর্ভাবস্থায় বারবার মিসক্যারেজ হতে পারে
৭. ক্লান্তি ও রক্তশূন্যতা
👉 অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে শরীরে রক্তশূন্যতা (অ্যানিমিয়া) দেখা দিতে পারে
👉 হাত-পা দুর্বল লাগা ও মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে
জরায়ুতে টিউমারের কারণ
এখনো নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি, তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ রয়েছে—
🔹 হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের অতিরিক্ত বৃদ্ধি টিউমারের কারণ হতে পারে।
🔹 পারিবারিক ইতিহাস: যদি মা বা বোনের জরায়ু টিউমার থাকে, তবে ঝুঁকি বেশি।
🔹 স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, যা টিউমারের কারণ হতে পারে।
🔹 বয়স: সাধারণত ৩০-৫০ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।
🔹 খাদ্যাভ্যাস: চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।
জরায়ুতে টিউমারের চিকিৎসা
টিউমারের ধরন ও আকার অনুযায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করা হয়।
১. ওষুধ ও হরমোন থেরাপি
👉 ছোট আকারের টিউমার হলে ওষুধের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়
👉 জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল বা হরমোন থেরাপি কার্যকর হতে পারে
২. অস্ত্রোপচার (সার্জারি)
👉 মায়োমেকটমি (Myomectomy): ফাইব্রয়েড অপসারণের জন্য ব্যবহৃত হয়
👉 হিস্টেরেকটমি (Hysterectomy): জরায়ু সম্পূর্ণ অপসারণ করা হয়, যা স্থায়ী সমাধান
৩. বিকিরণ বা কেমোথেরাপি
👉 ক্যানসারজনিত টিউমারের ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি প্রয়োজন হতে পারে
৪. লাইফস্টাইল পরিবর্তন
👉 স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
👉 ওজন নিয়ন্ত্রণ করা
👉 স্ট্রেস কমানো
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন—
✅ দীর্ঘদিন মাসিক অনিয়মিত থাকলে
✅ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে
✅ তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হলে
✅ গর্ভধারণে সমস্যা হলে
✅ ওজন অস্বাভাবিকভাবে বাড়লে
শেষ কথা
জরায়ুর টিউমার অনেক নারীর মধ্যেই দেখা যায়, তবে সচেতন থাকলে এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আপনার যদি এমন অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, তাহলে নিচে কমেন্ট করুন এবং পোস্টটি শেয়ার করুন, যাতে আরও নারীরা সচেতন হতে পারেন।
