সন্তান না হওয়া অনেক দম্পতির জন্য মানসিকভাবে কষ্টদায়ক হতে পারে। বাংলাদেশে প্রায় ১৫-২০% দম্পতি বন্ধ্যাত্ব সমস্যায় ভুগছেন, যা পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে।
অনেকেই প্রথমে বুঝতে পারেন না কোন ডাক্তার দেখানো উচিত বা কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। তাই, এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো কোন ডাক্তার দেখাবেন, কখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন এবং বন্ধ্যাত্বের সম্ভাব্য কারণ ও চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?
১ বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত শারীরিক সম্পর্কের পরেও গর্ভধারণ না হলে।
৩৫ বছরের বেশি বয়স হলে ৬ মাস চেষ্টা করার পরেও গর্ভধারণ না হলে।
অনিয়মিত মাসিক, হরমোনজনিত সমস্যা বা ওভারিয়ান সিস্ট থাকলে।
পুরুষের বীর্য সংক্রান্ত সমস্যা বা যৌন দুর্বলতা থাকলে।
একাধিকবার গর্ভপাত হয়ে থাকলে।
বাচ্চা না হলে কোন ডাক্তার দেখাতে হয়?
১. গাইনোকোলজিস্ট (স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ) – নারীদের জন্য
যদি কোনো নারী গর্ভধারণে সমস্যার সম্মুখীন হন, তবে প্রথমেই গাইনোকোলজিস্ট বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
🔹 গাইনোকোলজিস্ট কী পরীক্ষা করেন?
হরমোন পরীক্ষা (FSH, LH, AMH)
আল্ট্রাসোনোগ্রাফি (ডিম্বাশয় ও জরায়ুর অবস্থা জানতে)
ওভুলেশন টেস্ট (ডিম্বাণু উৎপাদন হচ্ছে কিনা)
জরায়ুর কোনো সমস্যা আছে কিনা তা নির্ণয়
২. এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট (হরমোন বিশেষজ্ঞ) – হরমোনজনিত সমস্যার জন্য
যদি থাইরয়েড, PCOS বা প্রোল্যাক্টিন হরমোনের সমস্যা থাকে, তাহলে এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট দেখানো দরকার।
হরমোনজনিত সমস্যার কারণে অনেক সময় ওভুলেশন ঠিকমতো হয় না, যা বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে।
৩. ইউরোলজিস্ট বা এন্ড্রোলজিস্ট – পুরুষদের জন্য
যদি পুরুষের বীর্যের মান খারাপ হয়, স্পার্মের সংখ্যা কম থাকে বা যৌন দুর্বলতা থাকে, তবে ইউরোলজিস্ট বা এন্ড্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কিছুক্ষেত্রে Varicocele (শুক্রাণুর সঞ্চালনে বাধা) বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে পুরুষদের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।
🔹 পুরুষদের জন্য পরীক্ষাগুলো:
Semen Analysis (বীর্যের মান পরীক্ষা)
হরমোন পরীক্ষা (Testosterone, FSH, LH, Prolactin)
ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড (Varicocele বা শুক্রাশয়ের সমস্যা নির্ণয়ের জন্য)
৪. ইনফার্টিলিটি স্পেশালিস্ট (বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞ) – IVF বা উন্নত চিকিৎসার জন্য
যদি গাইনোকোলজিস্ট বা ইউরোলজিস্টের চিকিৎসায় ফল না আসে, তবে বন্ধ্যাত্ব বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
ইনফার্টিলিটি স্পেশালিস্টরা IVF (টেস্ট টিউব বেবি), IUI (Intrauterine Insemination), বা অন্যান্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেন।
সন্তান না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ
নারীদের কারণ:
🔹 ওভুলেশন সমস্যা (PCOS, থাইরয়েড, AMH কম থাকা)
🔹 ফ্যালোপিয়ান টিউব ব্লক (Blocked Fallopian Tube)
🔹 জরায়ুর সমস্যা (Fibroids, Endometriosis)
🔹 হরমোনের ভারসাম্যহীনতা
🔹 বারবার গর্ভপাত হওয়া
পুরুষদের কারণ:
🔹 স্পার্মের সংখ্যা কম বা গুণগত মান খারাপ
🔹 Varicocele (শুক্রাশয়ের শিরায় অসামঞ্জস্য)
🔹 Testosterone হরমোনের সমস্যা
🔹 অতিরিক্ত ধূমপান বা অ্যালকোহল সেবন
🔹 জেনেটিক সমস্যা (Klinefelter Syndrome, Y-Chromosome Deletion)
বাচ্চা না হলে কীভাবে চিকিৎসা করা হয়?
প্রাকৃতিক ও ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা:
ওজন নিয়ন্ত্রণ করা (বিশেষত PCOS থাকলে)
ওভুলেশন বৃদ্ধির জন্য ওষুধ (Clomid, Letrozole)
হরমোনের ভারসাম্য ঠিক করা
পুরুষদের জন্য বীর্যের মান উন্নত করার ওষুধ ও ডায়েট
আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি:
IUI (Intrauterine Insemination): বীর্য পরিশোধন করে সরাসরি জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়।
IVF (In Vitro Fertilization): পরীক্ষাগারে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে গর্ভধারণ করানো হয়।
ICSI (Intracytoplasmic Sperm Injection): স্পার্ম সরাসরি ডিম্বাণুর ভেতরে প্রবেশ করানো হয়।
Surgery: জরায়ু বা শুক্রাশয়ের যেকোনো গঠনগত সমস্যা থাকলে অপারেশন করা হয়।
উপসংহার: চিকিৎসা নিন, আশা হারাবেন না
সন্তান না হলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, কারণ আধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে অনেক দম্পতি অভিভাবক হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। যদি ১ বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করেও গর্ভধারণ সম্ভব না হয়, তবে উপযুক্ত বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করুন।
