বুক ধরফর কিসের লক্ষণ? কারণ, সতর্কতা ও প্রতিকার | বুক ধড়ফড়ানি দূর করার উপায়

অনেকেই হঠাৎ বুক ধরফর বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার অনুভূতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন। কখনো এটি স্বাভাবিক হতে পারে, আবার কখনো এটি হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা মানসিক চাপের লক্ষণও হতে পারে।

এটি যদি খুব বেশি সময় ধরে চলে, নিয়মিত হয়, বা শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা বা বুক ব্যথার সঙ্গে দেখা দেয়, তাহলে এটি গুরুত্ব সহকারে নেওয়া জরুরি।

এই ব্লগে আমরা জানবো—

  • বুক ধরফর করার কারণ
  • কখন এটি বিপজ্জনক হতে পারে
  • কীভাবে এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব

বুক ধরফর করার কারণ

বুক ধরফর করা বা হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। নিচে প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হলো—

১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, ভয় বা স্ট্রেসের কারণে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়।

২. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল গ্রহণ

বেশি চা, কফি, সফট ড্রিংক বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে।

৩. উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ

উচ্চ রক্তচাপ থাকলে হৃদপিণ্ড বেশি কাজ করে, যা বুক ধরফর করতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপ থাকলে মাথা ঘোরা ও ক্লান্তির পাশাপাশি বুক ধড়ফড়ানি দেখা দিতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

৪. হার্টের সমস্যা

যদি বুক ধরফর করার পাশাপাশি বুক ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা মাথা ঘোরা থাকে, তাহলে এটি হৃদরোগের লক্ষণ হতে পারে।

৫. থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা

থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তা থাকলে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হতে পারে।

৬. রক্তস্বল্পতা (এনিমিয়া)

শরীরে আয়রন বা হিমোগ্লোবিনের অভাব হলে হার্টকে বেশি কাজ করতে হয়, ফলে বুক ধরফর করতে পারে।

৭. শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন)

শরীরে জরুরি মিনারেল (Electrolytes) কমে গেলে হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হতে পারে।

বুক ধরফর কখন বিপজ্জনক

সব সময় বুক ধরফর করা বিপজ্জনক নয়, তবে নিচের লক্ষণগুলো থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি—

  • বুক ধরফর করার পাশাপাশি বুকের ব্যথা বা চাপ অনুভূত হলে
  • শ্বাসকষ্ট হলে
  • মাথা ঘোরা বা বমি বমি ভাব থাকলে
  • অত্যন্ত ক্লান্তি অনুভব হলে
  • অজ্ঞান হয়ে গেলে

এসব লক্ষণ থাকলে দ্রুত হার্টের ডাক্তার (কার্ডিওলজিস্ট) এর পরামর্শ নেওয়া উচিত।

বুক ধরফর কমানোর উপায়

১. মানসিক চাপ কমানো

স্ট্রেস কমাতে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে।

২. পর্যাপ্ত পানি পান করা

শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, তাই প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

৩. চা, কফি ও অ্যালকোহল কমানো

বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ থেকে বিরত থাকা ভালো।

৪. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা

ঘুমের অভাব থাকলে হৃদস্পন্দন অস্বাভাবিক হতে পারে।

৫. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া

হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে আয়রন, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

৬. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

যদি বুক ধরফর নিয়মিত হয় বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দেয়, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

শেষ কথা

বুক ধরফর করা সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে এটি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সঙ্গে দেখা দেয়, তাহলে এটি অবহেলা করা উচিত নয়। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিলে এ সমস্যার ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top