আমিষ (Protein) আমাদের শরীরের অন্যতম প্রধান পুষ্টি উপাদান। এটি পেশি গঠন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হরমোন উৎপাদন ও শরীরের কোষ পুনর্গঠনের জন্য অপরিহার্য। আমিষ জাতীয় খাবার শরীরকে শক্তিশালী করে এবং সামগ্রিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক।
আমিষের উৎস
আমিষ প্রধানত দুই ধরনের উৎস থেকে পাওয়া যায়:
১. প্রাণিজ আমিষ
- মাছ
- মাংস (গরু, খাসি, মুরগি)
- ডিম
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার (পনির, দই, ঘি)
- সামুদ্রিক খাবার (চিংড়ি, কাঁকড়া, অক্টোপাস ইত্যাদি)

২. উদ্ভিজ্জ আমিষ
- ডাল (মসুর, মুগ, ছোলা, মটর)
- সয়াবিন
- বাদাম (চিনা বাদাম, কাঠবাদাম, কাজু বাদাম)
- বীজ (চিয়া সিড, ফ্লাক্স সিড, সূর্যমুখী বীজ)
- শাকসবজি (পালংশাক, ব্রকলি, ক্যাল)
- সিরিয়াল ও শস্য (ওটস, গম, ব্রাউন রাইস)
আমিষ জাতীয় খাবারের উপকারিতা
১. পেশি গঠনে সহায়ক
- আমিষ শরীরের পেশি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- নিয়মিত ব্যায়ামের সঙ্গে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার পেশির ক্ষয় রোধ করে।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
- আমিষে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- সংক্রমণ ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
৩. হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী
- দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারে থাকা ক্যালসিয়াম ও আমিষ হাড়কে শক্তিশালী করে।
- বয়সজনিত হাড়ের ক্ষয় রোধে সহায়ক।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
- আমিষ সমৃদ্ধ খাবার দীর্ঘ সময় ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- বিপাক ক্রিয়া উন্নত করে ও চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে।
৫. ব্রেন ফাংশন উন্নত করে
- প্রোটিন ব্রেনের নিউরোট্রান্সমিটারের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৬. হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- আমিষ হরমোন উৎপাদন ও ভারসাম্য বজায় রাখে।
- ইনসুলিন, গ্রোথ হরমোন, থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা বাড়ায়।
৭. ত্বক, চুল ও নখের স্বাস্থ্য উন্নত করে
- কোলাজেন উৎপাদন বাড়িয়ে ত্বক সুস্থ রাখে।
- চুল পড়া কমায় ও নখ শক্তিশালী করে।
আমিষ খাওয়ার সঠিক পরিমাণ
আমিষের চাহিদা বয়স, ওজন ও দৈনিক শারীরিক কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে।
- সাধারণত, প্রতি কেজি ওজনের জন্য ০.৮-১.৫ গ্রাম আমিষ গ্রহণ করা সুপারিশ করা হয়।
- অ্যাথলেটদের জন্য প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৬-২.২ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন।
- শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য আমিষ গ্রহণের পরিমাণ বেশি হওয়া উচিত।
বেশি আমিষ খাওয়ার ক্ষতিকর দিক
যদিও আমিষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে কিছু স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে:
- কিডনির কার্যকারিতা কমতে পারে।
- অতিরিক্ত আমিষ গ্রহণ লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
- হজমের সমস্যা ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে।
- রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গেঁটেবাত হতে পারে।
উপসংহার
আমিষ জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য। এটি পেশি বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, হাড় শক্তিশালীকরণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, অতিরিক্ত গ্রহণ এড়িয়ে সঠিক পরিমাণে আমিষ খাওয়া উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসেবে আমিষ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত।