গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরের প্রয়োজনীয়তা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি হয়। পানি পান এই সময়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি মায়ের শরীরের পাশাপাশি শিশুর সঠিক বিকাশেও ভূমিকা রাখে। তবে অনেক সময় গর্ভবতী মা যথেষ্ট পানি পান করতে ভুলে যান বা পানি পান করার ইচ্ছা কমে যায়, যা বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এই পোস্টে আলোচনা করবো গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়ার ফলে কী কী সমস্যা হতে পারে এবং এর প্রতিকার কী।
গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়ার সমস্যা
গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়ার ফলে শরীর এবং গর্ভের শিশুর ওপর নানাবিধ নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
১. ডিহাইড্রেশন (পানিশূন্যতা)
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার ফলে মায়ের শরীরে ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। এর ফলে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, এবং রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
২. অ্যামনিওটিক ফ্লুইডের পরিমাণ কমে যাওয়া
অ্যামনিওটিক ফ্লুইড হলো সেই তরল যা গর্ভের শিশুকে সুরক্ষা দেয়। পানি কম খেলে এই তরলের পরিমাণ কমে যেতে পারে, যা শিশুর বিকাশে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে।
৩. কব্জি ও পায়ে ফোলাভাব বৃদ্ধি
যথেষ্ট পানি না খেলে শরীরে তরল ধরে রাখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে হাত, পা, ও মুখে ফোলাভাব দেখা দিতে পারে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্য
গর্ভাবস্থায় হজম প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়ে যায়। পানি কম খাওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য এবং গ্যাসের সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
৫. প্রিম্যাচিউর লেবার (অকাল প্রসব)
পানি কম খাওয়া প্রিম্যাচিউর লেবারের একটি কারণ হতে পারে। জরায়ু সংকোচন বেড়ে অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. মায়ের শরীরে অতিরিক্ত উত্তাপ তৈরি হওয়া
গর্ভাবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে পানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পানি কম খেলে মায়ের শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়া প্রতিরোধে করণীয়
যথেষ্ট পানি পান করা মায়ের এবং শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। নিচে কিছু উপায় দেওয়া হলো যা অনুসরণ করলে পানিশূন্যতা প্রতিরোধ করা সম্ভব:
১. প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
বিশুদ্ধ পানি পান করা অভ্যাস করুন। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।
২. ফলের রস এবং স্যুপ খাওয়া
ফলের রস, স্যুপ, এবং তরল জাতীয় খাবার শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে।
৩. পানির বোতল সঙ্গে রাখুন
যেখানেই যান না কেন, একটি পানির বোতল সঙ্গে রাখুন এবং মাঝে মাঝে অল্প অল্প করে পানি পান করুন।
৪. হালকা লবণ ও গ্লুকোজযুক্ত পানীয় পান করুন
যদি শরীরে লবণের ঘাটতি থাকে, তবে হালকা লবণ পানি বা গ্লুকোজ পানীয় খেতে পারেন। এটি পানিশূন্যতা রোধ করবে।
৫. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন
ক্যাফেইন শরীর থেকে বেশি পরিমাণে পানি বের করে দেয়। তাই চা, কফি ইত্যাদি পরিমাণে কম পান করুন।
৬. ফলমূল ও শাকসবজি বেশি খান
তরমুজ, শসা, এবং কমলা লেবুর মতো জলে ভরপুর ফল খাওয়া শরীরে পানির চাহিদা পূরণে সহায়ক।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন প্রয়োজন
যদি আপনি নিচের সমস্যাগুলো অনুভব করেন, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- তীব্র মাথাব্যথা।
- প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যাওয়া।
- দুর্বলতা বা মাথা ঘোরা।
- পেটব্যথা বা শিশুর নড়াচড়া কমে যাওয়া।
গর্ভাবস্থায় পানি পান করা কেন গুরুত্বপূর্ণ
গর্ভাবস্থায় পানি পান করার গুরুত্ব অনেক। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, প্লাসেন্টার মাধ্যমে শিশুকে পুষ্টি সরবরাহ করে, এবং কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে। পর্যাপ্ত পানি পান করা মা এবং শিশুর উভয়ের জন্য উপকারী।
উপসংহার
গর্ভাবস্থায় পানি কম খাওয়া মা এবং শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তাই এই সময়ে যথেষ্ট পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। পানি পান করার অভ্যাস তৈরি করুন এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অনুসরণ করুন। যদি কোনো সমস্যা অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।