প্লেটলেট, যাকে রক্তকণিকা বা থ্রম্বোসাইট বলা হয়, রক্তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি রক্ত জমাট বাঁধানোর প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং রক্তক্ষরণ থেকে আমাদের শরীরকে রক্ষা করে। প্লেটলেটের কার্যক্ষমতা সঠিক না থাকলে ছোট থেকে বড় অনেক শারীরিক সমস্যা হতে পারে। এই ব্লগে আমরা প্লেটলেটের কাজ, এর কার্যপ্রণালী এবং প্লেটলেটের মাত্রা ঠিক রাখতে করণীয় বিষয়ে আলোচনা করব।
প্লেটলেট কী?
প্লেটলেট হলো রক্তের একধরনের ছোট, অদ্রবণীয় কোষ। এটি হাড়ের মজ্জায় তৈরি হয় এবং রক্তপ্রবাহে সক্রিয় থাকে। সাধারণত একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্কের প্রতি মাইক্রোলিটার রক্তে ১,৫০,০০০ থেকে ৪,৫০,০০০ প্লেটলেট থাকে।
রক্তে প্লেটলেটের কাজ
প্লেটলেট আমাদের শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে থাকে, যার মধ্যে মূল কাজগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:
১. রক্ত জমাট বাঁধানো
- শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগলে বা কাটলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে প্লেটলেট দ্রুত সক্রিয় হয়।
- এটি আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে জমাট বাঁধিয়ে রক্তপাত থামায়।
২. ক্ষত নিরাময়
- প্লেটলেট ক্ষতস্থানে গিয়ে প্রোটিন নির্গত করে, যা নতুন টিস্যু গঠনে সহায়তা করে।
- এটি ক্ষত নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. রক্তনালী রক্ষা
- প্লেটলেট রক্তনালীর ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো পুনরুদ্ধার করে।
- এটি রক্তনালীর প্রাচীরকে মজবুত এবং স্থিতিশীল রাখে।
৪. ইমিউন প্রতিক্রিয়া
- প্লেটলেট রক্তে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
- এটি শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কাজ করে।
রক্তে প্লেটলেটের অভাবের লক্ষণ
প্লেটলেটের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কমে গেলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে, যেমন:
- রক্তপাত সহজে বন্ধ না হওয়া।
- দাঁতের মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত।
- ত্বকের নিচে ছোট ছোট রক্তক্ষরণের দাগ (পিটেকিয়া)।
- অতিরিক্ত দুর্বলতা ও ক্লান্তি।
- চোট লাগলে সহজেই রক্ত জমাট না বাঁধা।
প্লেটলেটের মাত্রা কমে যাওয়ার কারণ
১. ডেঙ্গু বা ভাইরাল ইনফেকশন
- ডেঙ্গু জ্বর প্লেটলেট ধ্বংস করে এবং এর সংখ্যা কমিয়ে দেয়।
২. হাড়ের মজ্জার সমস্যা
- হাড়ের মজ্জায় প্লেটলেট উৎপাদন ব্যাহত হলে এটি কমে যায়।
৩. রক্ত সংক্রান্ত রোগ
- যেমন: লিউকেমিয়া বা অ্যানিমিয়া।
৪. অটোইমিউন রোগ
- লুপাস বা আইটিপি রোগে শরীর নিজেই প্লেটলেট ধ্বংস করে।
৫. ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
- কিছু এন্টিবায়োটিক বা ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ প্লেটলেট কমিয়ে দিতে পারে।
প্লেটলেটের মাত্রা সঠিক রাখতে করণীয়
১. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন
- ভিটামিন বি১২, সি, এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান।
- রক্ত বাড়ানোর জন্য ডালিম, বিট, ব্রকলি, এবং গাজর সহ পুষ্টিকর খাবার যোগ করুন।
২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে রক্ত স্বাভাবিকভাবে চলাচল করে।
৩. পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম
- শরীরের প্লেটলেট উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম অত্যন্ত জরুরি।
৪. অতিরিক্ত স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন
- স্ট্রেস প্লেটলেটের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
- প্লেটলেটের মাত্রা কমে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
উপসংহার
প্লেটলেট আমাদের শরীরের একটি অপরিহার্য উপাদান, যা রক্তক্ষরণ বন্ধ করার পাশাপাশি ক্ষত নিরাময়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্লেটলেটের অভাব বা কার্যক্ষমতার হ্রাস হলে দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। সঠিক জীবনযাত্রা ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের মাধ্যমে প্লেটলেটের সুস্থতা নিশ্চিত করা সম্ভব।