অর্শ বা পাইলস এমন একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর সমস্যা, যা অনেকের জীবনের মান কমিয়ে দেয়। এটি মলদ্বারের শিরাগুলোর ফোলাভাব এবং প্রদাহজনিত একটি অবস্থা, যা ব্যথা, রক্তপাত এবং মলত্যাগে সমস্যা তৈরি করে। বাংলাদেশে অর্শ রোগ একটি সাধারণ সমস্যা, যা অপর্যাপ্ত ডায়েট এবং অনিয়মিত জীবনযাপনের কারণে আরও প্রকট হয়ে উঠছে। এই ব্লগে অর্শ রোগের কারণ, লক্ষণ এবং মুক্তির উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
অর্শ রোগের কারণ
অর্শ রোগ প্রধানত জীবনযাত্রার কারণে হয়ে থাকে। নিচে এর প্রধান কারণগুলো উল্লেখ করা হলো:
- কোষ্ঠকাঠিন্য: দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য মলদ্বারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
- ডায়রিয়া: দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়ার কারণেও অর্শ হতে পারে।
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার: অতিরিক্ত ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার মলদ্বারে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করে।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় মলদ্বারে চাপ বাড়ার কারণে এটি হতে পারে।
- অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিরিক্ত বসে থাকা।
- জিনগত প্রভাব: পরিবারের মধ্যে অর্শ রোগ থাকলে এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অর্শ রোগের লক্ষণ
বাহ্যিক অর্শ:
- মলদ্বারের চারপাশে ফোলা বা গুটির মতো অনুভূতি।
- মল ত্যাগের সময় ব্যথা ও অস্বস্তি।
- কখনো কখনো মলদ্বারে চুলকানি।
অভ্যন্তরীণ অর্শ:
- মলত্যাগের সময় রক্তপাত।
- মলদ্বারের ভেতরে ব্যথা বা অস্বস্তি।
- মলের সঙ্গে শ্লেষ্মা।
অর্শ রোগ থেকে মুক্তির উপায়
অর্শ রোগ থেকে মুক্তি পেতে জীবনযাত্রা পরিবর্তন এবং চিকিৎসা উভয়ের প্রয়োজন হতে পারে।
১. ডায়েট পরিবর্তন করুন
- আঁশযুক্ত খাবার খান, যেমন: শাকসবজি, ফলমূল, ব্রাউন রাইস।
- প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন (দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস)।
- অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
২. সঠিক শৌচ অভ্যাস বজায় রাখুন
- মলত্যাগের সময় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকবেন না।
- কোষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে মল ত্যাগের অভ্যাস করুন।
৩. ব্যায়াম ও শারীরিক কার্যকলাপ
- প্রতিদিন নিয়মিত হাঁটুন বা ব্যায়াম করুন।
- বসে কাজ করার সময় প্রতি এক ঘণ্টা পর একটু হাঁটুন।
৪. গরম পানির সিটজ বাথ
- একটি বালতিতে কুসুম গরম পানি নিয়ে মলদ্বার ১৫-২০ মিনিট ডুবিয়ে রাখুন।
- এটি ব্যথা কমাতে এবং ফোলা শিরা প্রশমিত করতে সহায়তা করে।
৫. ওষুধ ও ক্রিম
- স্থানীয় অ্যানালজেসিক ক্রিম বা অর্শের ওষুধ ব্যবহার করুন।
- ফাইবার সাপ্লিমেন্ট এবং মল নরম করার ওষুধ (ডাক্তারের পরামর্শে) নিতে পারেন।
৬. ঘরোয়া পদ্ধতি
- নারকেল তেল বা অ্যালোভেরা জেল মলদ্বারের ক্ষত স্থানে ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়।
- একটি তুলোয় হিম ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে আক্রান্ত স্থানে চেপে ধরুন।
৭. আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি
যদি ঘরোয়া চিকিৎসা কাজ না করে, তবে আধুনিক চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে:
- ব্যান্ড লিগেশন: অর্শ গুটির চারপাশে একটি ব্যান্ড দিয়ে রক্ত প্রবাহ বন্ধ করা হয়।
- স্ক্লেরোথেরাপি: অর্শে বিশেষ রাসায়নিক ইনজেকশন দিয়ে সংকুচিত করা হয়।
- লেজার সার্জারি: লেজারের মাধ্যমে অর্শ সম্পূর্ণ সরিয়ে ফেলা হয়।
- অপারেশন: বড় ধরনের অর্শের ক্ষেত্রে এটি করা হয়।
অর্শ রোগ প্রতিরোধের উপায়
- আঁশযুক্ত খাবার এবং প্রচুর পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
- টয়লেটে অতিরিক্ত সময় ব্যয় এড়িয়ে চলুন।
- অতিরিক্ত ওজন এড়ানোর চেষ্টা করুন।
- ভারী কাজ করার সময় সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করুন।
- দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা এড়িয়ে চলুন।
উপসংহার
অর্শ রোগ যথাযথ জীবনধারা এবং সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় এটি নিয়ন্ত্রণে আনা গেলে সার্জারির প্রয়োজন পড়বে না। আপনার যদি অর্শ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকে বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হয়, রজু আকনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।