রক্তচাপ আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে। তবে, অনেক সময় রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যেতে পারে, যা আমরা “লো প্রেসার” বা নিম্ন রক্তচাপ হিসেবে চিনি। এটি শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো লো প্রেসার হলে কী কী করণীয়, কীভাবে এটি প্রতিরোধ করা যায়, এবং এর সম্ভাব্য কারণসমূহ।
লো প্রেসার বা নিম্ন রক্তচাপ কী?
স্বাভাবিক রক্তচাপ ১২০/৮০ mmHg হিসেবে ধরা হয়। যখন রক্তচাপ ৯০/৬০ mmHg-এর নিচে নেমে যায়, তখন সেটিকে লো প্রেসার বলা হয়। এটি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে পর্যাপ্ত রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটায়, যা শরীরের কার্যক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
লো প্রেসারের লক্ষণ
- মাথা ঘোরা বা ভারসাম্য হারানো
- বমি বমি ভাব
- দুর্বলতা এবং ক্লান্তি
- বুক ধড়ফড় করা
- ঝাপসা দেখা
- ঠান্ডা বা স্যাঁতসেঁতে ত্বক
- দ্রুত শ্বাস নেওয়া
লো প্রেসার হলে করণীয়
১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন
ডিহাইড্রেশন লো প্রেসারের অন্যতম কারণ। শরীরে পানির ঘাটতি হলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
২. লবণাক্ত খাবার খান
লো প্রেসার হলে সামান্য লবণযুক্ত পানি বা খাবার খাওয়া উপকারী হতে পারে। তবে, অতিরিক্ত লবণ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়
চা বা কফি সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। তবে এটি নিয়মিত সমাধান নয়।
৪. পা উঁচু করে শোয়া
লো প্রেসারের কারণে মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা অনুভব করলে পা উঁচু করে শুয়ে থাকুন। এটি রক্তপ্রবাহকে মস্তিষ্কে দ্রুত পৌঁছাতে সাহায্য করে।
৫. পুষ্টিকর খাবার খান
লো প্রেসার এড়াতে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা জরুরি। খাদ্যতালিকায় ফল, শাকসবজি, প্রোটিন, এবং পুরো শস্য অন্তর্ভুক্ত করুন।
৬. ঘন ঘন ছোট খাবার খান
বেশি সময় না খেয়ে থাকার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই ঘন ঘন ছোট খাবার খান।
৭. ধীরে চলুন
হঠাৎ করে উঠে দাঁড়ালে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে উঠুন এবং চলাফেরা করুন।
লো প্রেসারের কারণসমূহ
- ডিহাইড্রেশন: শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
- পুষ্টির অভাব: আয়রন, ভিটামিন বি১২, এবং ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি রক্তচাপ কমানোর কারণ হতে পারে।
- ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া: কিছু ওষুধের প্রভাবে রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রক্তচাপ কমে যাওয়া স্বাভাবিক।
- হৃদরোগ বা হরমোনজনিত সমস্যা: হৃদযন্ত্রের দুর্বলতা বা থাইরয়েডের সমস্যা রক্তচাপ কমানোর কারণ হতে পারে।
চিকিৎসকের কাছে কখন যাবেন?
লো প্রেসার যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- অতিরিক্ত মাথা ঘোরা
- বারবার অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- বুকের ব্যথা
- শ্বাসকষ্ট
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
- নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন।
- সুষম খাবার খান।
- শারীরিক পরিশ্রমের পর বিশ্রাম নিন।
- স্ট্রেস কমানোর জন্য মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করুন।
উপসংহার
লো প্রেসার একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর প্রতি অবহেলা করা উচিত নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত পানি পান, এবং প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ করলে এটি সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যদি সমস্যাটি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার সুস্বাস্থ্যই আমাদের কাম্য।