ডিভোর্স, বিশেষত মেয়েদের জন্য, একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং জটিল বিষয়। সমাজে ডিভোর্স নিয়ে নানা ধরনের ধ্যানধারণা প্রচলিত। তবে, মেয়েদের ডিভোর্সের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং আইনগত প্রভাব আরও গভীর এবং বহুমুখী। আমি রাজু আকন, একজন কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, আজকের এই ব্লগে মেয়েদের ডিভোর্সের পরিণতি এবং করণীয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ডিভোর্সের সামাজিক প্রভাব
১. সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি
বাংলাদেশে ডিভোর্সপ্রাপ্ত মেয়েদের অনেক সময় নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। সমাজের একাংশ তাদের জীবনের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচনা করে।
২. সম্পর্কের জটিলতা
ডিভোর্সের ফলে পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটে। অনেক সময় সমাজে একা হয়ে যাওয়ার ভয় কাজ করে।
ডিভোর্সের আইনগত দিক
১. সম্পত্তি বিভাজন
ডিভোর্সের সময় মেয়েরা তাদের অধিকার অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগ পেতে পারেন। বাংলাদেশের পারিবারিক আইন এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করে।
২. সন্তানের অধিকার
সন্তানের হেফাজত এবং ভরণপোষণ নিয়ে অনেক সময় আইনি ঝামেলা সৃষ্টি হয়। আদালত সাধারণত সন্তানের সেরা স্বার্থের কথা বিবেচনা করে রায় দেন।
৩. আর্থিক সহায়তা
বাংলাদেশের পারিবারিক আদালত মেয়েদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য আইনগত ব্যবস্থার কথা বলে।
ডিভোর্সের মানসিক প্রভাব
১. মানসিক চাপ
ডিভোর্সের কারণে মেয়েরা গভীর মানসিক চাপ ও হতাশার শিকার হতে পারেন। এটি মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
২. আত্মবিশ্বাসের অভাব
ডিভোর্সের পর সমাজের নেতিবাচক মনোভাব মেয়েদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দিতে পারে।
৩. নতুন শুরুর ভয়
নতুন করে জীবন শুরু করার চিন্তা অনেক সময় দুশ্চিন্তা সৃষ্টি করে।
ডিভোর্সের পর করণীয়
১. পেশাদার কাউন্সেলিং
একজন পেশাদার কাউন্সেলরের সাহায্য মানসিক চাপ দূর করতে এবং জীবনে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
২. আর্থিক স্বনির্ভরতা
নিজেকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করা জীবনে নতুন সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে।
৩. ইতিবাচক সম্পর্ক তৈরি
পরিবার এবং বন্ধুদের সহায়তায় একটি সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করা মানসিক শক্তি বাড়ায়।
৪. নতুন দক্ষতা অর্জন
নিজেকে উন্নত করার জন্য নতুন কিছু শেখা বা পেশাগত দক্ষতা অর্জন করা যেতে পারে।
বাস্তব উদাহরণ
রুমি (ছদ্মনাম) তার ডিভোর্সের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। তবে, পেশাদার কাউন্সেলিং এবং আত্মনির্ভরতার মাধ্যমে তিনি তার জীবনকে নতুন করে সাজিয়েছেন এবং আজ একজন সফল উদ্যোক্তা।
উপসংহার
মেয়েদের ডিভোর্স একটি কঠিন অভিজ্ঞতা হতে পারে, তবে এটি একটি নতুন শুরুর সুযোগও বটে। নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থেকে এবং মানসিক ও আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে গেলে ডিভোর্সের পর জীবন নতুনভাবে গড়ে তোলা সম্ভব।