থিওরিটিকেল সাইকোলজি: মনস্তাত্ত্বিক ধারণার ভিত্তি

থিওরিটিকেল সাইকোলজি (Theoretical Psychology) হল মনোবিজ্ঞানের একটি শাখা, যা বিভিন্ন মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব ও ধারণার ওপর ভিত্তি করে মানসিক প্রক্রিয়াগুলোর ব্যাখ্যা প্রদান করে। এই শাখাটি মানুষের আচরণ, চিন্তা, আবেগ, এবং ব্যক্তিত্বের কাঠামো বোঝার জন্য বিভিন্ন মনোবৈজ্ঞানিক মডেল ও তত্ত্বের ওপর গবেষণা করে। এই তত্ত্বগুলো প্রায়শই পরীক্ষামূলক এবং গবেষণার ভিত্তিতে গঠিত হয়।

থিওরিটিকেল সাইকোলজির মূল তত্ত্বগুলো

১. সাইকোঅ্যানালিসিস (Psychoanalysis)

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের (Sigmund Freud) প্রতিষ্ঠিত এই তত্ত্বটি মানুষের অবচেতন মানসিক প্রক্রিয়ার ওপর গুরুত্ব দেয়। ফ্রয়েড বিশ্বাস করতেন যে আমাদের আচরণ এবং অনুভূতি বেশিরভাগই অবচেতন প্রভাব দ্বারা পরিচালিত হয়, যা অতীত অভিজ্ঞতা এবং দমন করা ইচ্ছার মাধ্যমে গঠিত হয়।

  • মূল ধারণা: মানুষের মানসিক জীবনের তিনটি স্তর থাকে—ইড (Id), ইগো (Ego), এবং সুপারইগো (Superego)। ইড আমাদের আদিম প্রবৃত্তি ও ইচ্ছা নিয়ে কাজ করে, ইগো বাস্তবতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, এবং সুপারইগো নৈতিকতা ও মূল্যবোধের প্রতিনিধিত্ব করে।

    raju akon youtube channel subscribtion

২. বিহেভিওরিজম (Behaviorism)

বিহেভিওরিজম তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষের আচরণ মূলত বাহ্যিক প্রভাব এবং শিখন প্রক্রিয়ার ফল। এই তত্ত্বে বলা হয় যে মানুষের মানসিক অবস্থা এবং অভ্যন্তরীণ চিন্তাগুলোকে বিবেচনা করার প্রয়োজন নেই, বরং তাদের কার্যকলাপ ও আচরণের ওপর ভিত্তি করে গবেষণা করা উচিত।

  • মূল ব্যক্তিত্ব: জে বি ওয়াটসন (J.B. Watson) এবং বি এফ স্কিনার (B.F. Skinner) বিহেভিওরিজম তত্ত্বের প্রাথমিক প্রচারক ছিলেন।

৩. কগনিটিভ থিওরি (Cognitive Theory)

কগনিটিভ সাইকোলজি মানুষের চিন্তা-ভাবনা, উপলব্ধি, স্মৃতি, এবং সমস্যার সমাধানের প্রক্রিয়াগুলো নিয়ে কাজ করে। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের চিন্তা-ভাবনাই আমাদের আচরণের মূল চালিকা শক্তি।

  • মূল গবেষক: জিন পিয়াজে (Jean Piaget) এবং আলবার্ট বান্দুরা (Albert Bandura) কগনিটিভ সাইকোলজির ওপর গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা পরিচালনা করেছেন।

৪. হিউমানিস্টিক সাইকোলজি (Humanistic Psychology)

হিউমানিস্টিক সাইকোলজি মানুষের স্বাধীন ইচ্ছা, ব্যক্তিগত বিকাশ, এবং আত্ম-সিদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেয়। এই তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রতিটি মানুষই তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে উন্নতি করতে চায় এবং নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় পৌঁছাতে চায়।

  • মূল তত্ত্ববিদ: আব্রাহাম মাসলো (Abraham Maslow) এবং কার্ল রজার্স (Carl Rogers) হিউমানিস্টিক সাইকোলজির প্রধান তত্ত্ববিদ ছিলেন।

৫. ইভোলিউশনারি সাইকোলজি (Evolutionary Psychology)

ইভোলিউশনারি সাইকোলজি তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষের আচরণ এবং মানসিক প্রক্রিয়া বিবর্তনীয় প্রভাবের ফল। এই তত্ত্বটি বলে যে আমাদের মানসিক গঠন এবং আচরণ আমাদের পূর্বপুরুষদের জীবনের সাথে সম্পর্কিত।

  • মূল ধারণা: মানুষের মানসিক গঠন প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এবং এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কিছু বিশেষ আচরণীয় বৈশিষ্ট্য তৈরি হয়েছে।

থিওরিটিকেল সাইকোলজির গুরুত্ব

থিওরিটিকেল সাইকোলজি আমাদেরকে মানুষের মন এবং আচরণ সম্পর্কে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। বিভিন্ন তত্ত্বের মাধ্যমে আমরা মানসিক রোগ, ব্যক্তিত্বের বিকাশ, এবং সামাজিক মিথস্ক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি। এটি কেবল গবেষণায় নয়, মানসিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

থিওরিটিকেল সাইকোলজি আমাদের মানসিক প্রক্রিয়া এবং আচরণের জটিলতা বোঝার জন্য বিভিন্ন তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই তত্ত্বগুলো আমাদের ব্যক্তি ও সমাজের মানসিক কাঠামো, বিকাশ, এবং আচরণের বিশ্লেষণ করতে সহায়ক হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top