নবজাতকের ঠোঁট কালো হয়ে যাওয়া অনেক অভিভাবকের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি কোনও গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত দেয় না। নবজাতকের ঠোঁট কালো হওয়ার কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে, যা মূলত স্বাভাবিক এবং কিছুক্ষণের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। তবে কখনও কখনও এটি শারীরিক অসুস্থতার লক্ষণও হতে পারে।
নবজাতকের ঠোঁট কালো হওয়ার সাধারণ কারণ
১. অক্সিজেনের ঘাটতি:
নবজাতকের ঠোঁট কালো হওয়ার অন্যতম কারণ হতে পারে অক্সিজেনের অভাব। যেসব নবজাতকের শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহ হয় না, তাদের ঠোঁট ও ত্বকের রং নীল বা কালো দেখায়। এটি মেডিক্যাল ভাষায় ‘সাইনোসিস’ নামে পরিচিত। দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, কারণ এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যার ইঙ্গিত দিতে পারে।
২. পিগমেন্টেশন পরিবর্তন:
নবজাতকের ত্বকের রং জন্মের পর কিছু সময়ের জন্য পরিবর্তিত হতে পারে। এ সময় ঠোঁটের রঙ কিছুটা কালো বা গাঢ় হয়ে যেতে পারে, যা শিশুর জন্য স্বাভাবিক। কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে ত্বক স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
৩. তাপমাত্রার প্রভাব:
নবজাতকের ত্বক খুব সংবেদনশীল থাকে, তাই তাপমাত্রার পরিবর্তনে ঠোঁটের রঙও পরিবর্তিত হতে পারে। শীতের সময় ঠোঁট কালচে হতে পারে, কারণ ঠাণ্ডা পরিবেশে রক্ত সঞ্চালন ধীর হয়ে যায়।
৪. শুষ্কতা:
ঠোঁটের শুষ্কতা নবজাতকের ঠোঁট কালো দেখাতে পারে। শুষ্কতা সাধারণত জলবায়ু পরিবর্তন, অতিরিক্ত শীত, বা পর্যাপ্ত আর্দ্রতা না পাওয়ার কারণে হতে পারে।
৫. মেলানিনের বৃদ্ধি:
কিছু শিশুর ক্ষেত্রে জন্মের সময় বা কিছু সময় পরে ঠোঁটে মেলানিনের (ত্বকের রং তৈরি করা একটি পদার্থ) মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে ঠোঁটের রং কালো হয়ে যেতে পারে। এটি প্রায়শই বংশগত কারণে ঘটে।
৬. অসুস্থতা বা জ্বর:
যদি নবজাতক অসুস্থ থাকে বা জ্বর হয়, তবে ঠোঁটের রং কালো বা নীলচে হতে পারে। এটি ত্বকের রক্তপ্রবাহে পরিবর্তনের ফলে ঘটে এবং সাধারণত চিকিৎসা করালে ঠোঁটের রং স্বাভাবিক হয়ে আসে।
নবজাতকের ঠোঁট কালো হলে করণীয়
১. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ:
নবজাতকের ঘরের তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। বেশি ঠাণ্ডা পরিবেশে নবজাতকের ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে, তাই ঘর গরম রাখার ব্যবস্থা করা উচিত।
২. হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার:
নবজাতকের ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করতে শিশুর জন্য নিরাপদ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে, কোনও রাসায়নিকযুক্ত পণ্য ব্যবহার না করা উচিত।
৩. বুকের দুধ খাওয়ানো:
নবজাতকের ঠোঁট শুষ্ক বা কালো হয়ে গেলে তাকে নিয়মিত বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। এতে শিশুর শরীরে পর্যাপ্ত জলীয় অংশের সরবরাহ হয় এবং ঠোঁট আর্দ্র থাকে।
৪. ডাক্তারি পরামর্শ:
যদি ঠোঁট কালো হওয়ার সাথে অন্য কোনও শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমন শ্বাসকষ্ট, খাবার খেতে না পারা বা অতিরিক্ত জ্বর, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার:
নবজাতকের ঠোঁট কালো হওয়া সাধারণত কোনও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ নয়, তবে কোনও অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সঠিক যত্ন এবং পুষ্টি নিশ্চিত করলে ঠোঁটের রং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।