মানুষের উপকার করলে কি পাওয়া যায়

মানুষের উপকার করা একটি মহৎ গুণ, যা সমাজ ও ব্যক্তি উভয়ের জন্যেই অপরিহার্য। মানুষের উপকার করলে শুধু তার উপকারই হয় না, বরং নিজেকেও মানসিক, আধ্যাত্মিক, এবং সামাজিকভাবে সমৃদ্ধ করা যায়। ইসলামের নির্দেশনা, মানবিক মূল্যবোধ, এবং সামাজিক দায়িত্বশীলতা আমাদের শেখায় যে, উপকারের মাধ্যমে আমরা মানব সমাজকে উন্নত করতে পারি।

মানুষের উপকার করার উপকারিতা:

১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন:

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, মানুষকে সাহায্য করা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের অন্যতম উপায়। ইসলামে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি মানুষের কল্যাণে কাজ করে, সে আল্লাহর কাছ থেকে পুরস্কৃত হয়। দান, সৎকাজ, এবং দুঃস্থ মানুষের সাহায্য আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. মানসিক প্রশান্তি ও তৃপ্তি:

কাউকে সাহায্য করলে নিজেকেও মানসিক শান্তি ও তৃপ্তি অনুভব হয়। অন্যের সমস্যার সমাধান করতে পারলে নিজের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ ও স্বস্তি আসে। মন থেকে নিজের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়ে এবং নিজের মূল্যবোধ উন্নত হয়।

৩. সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়ন:

যদি আপনি অন্যের উপকার করেন, তাহলে আপনার প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয় এবং আপনি একজন বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। সমাজের লোকেরা আপনাকে শ্রদ্ধা করবে এবং যে কোনো সময় আপনার সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবে।

৪. নেতিবাচক মানসিকতা দূর করে:

মানুষের উপকার করলে ব্যক্তির মধ্যে নেতিবাচক মানসিকতা বা বিরূপতা কমে যায়। যেমন, ঈর্ষা, ঘৃণা বা দুঃখের পরিবর্তে মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি জন্মায়। এটি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক।

৫. সুখ ও ইতিবাচক মনোভাব বৃদ্ধি:

অন্যের উপকার করলে মনে একটি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠে। এটি দীর্ঘমেয়াদী সুখ ও সন্তুষ্টি এনে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, দান বা সাহায্য করলে মানুষের শরীরে অক্সিটোসিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা মানুষকে সুখী রাখে।

৬. পরবর্তী জীবনের পুরস্কার:

ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, দুনিয়াতে যারা মানুষের উপকার করে, তাদের জন্য আখিরাতে পুরস্কার অপেক্ষা করে। মানবসেবার মাধ্যমে আমরা আখিরাতে ভালো প্রতিদান পেতে পারি।

৭. মানবতার উন্নয়ন:

মানুষের উপকার করলে মানবিকতা বৃদ্ধি পায়। একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি হয়, যেখানে মানুষ একে অপরের পাশে থাকে এবং একে অপরকে সাহায্য করতে আগ্রহী হয়। এতে করে সমাজের সকলেই উপকৃত হয়।

৮. নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ:

যারা মানুষের উপকার করে, তারা ধীরে ধীরে সমাজের নেতা হিসেবে পরিচিত হয়। কারণ তাদের ওপর মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস জন্মায়। তারা মানুষের সমস্যা সমাধানে দক্ষ হয়ে ওঠে এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকাশ লাভ করে।

৯. সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি:

মানুষের উপকার করার মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। মানুষ যেমন মানুষের উপকার করে, তেমনই প্রকৃতি, প্রাণী, এবং অন্যান্য জীবিত সৃষ্টির প্রতিও সহানুভূতি বাড়ে।

১০. সমাজে শান্তি ও স্থিতি বজায় থাকে:

যদি আমরা একে অপরের প্রতি সদয় ও সহানুভূতিশীল হই, তবে সমাজে শান্তি ও স্থিতি বজায় থাকবে। সহায়তা এবং উপকারের চর্চা করলে সমাজে সংঘর্ষ, হিংসা, এবং বিভেদ কমে যায়।

উপকার করার কিছু সহজ উপায়:

  • বিপদে পড়া মানুষকে সহায়তা করা।
  • দুঃস্থদের জন্য দান করা।
  • অসুস্থ বা বৃদ্ধদের সাহায্য করা।
  • শিশুদের শিক্ষায় সহায়তা করা।
  • পরিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগী হওয়া।

মানুষের উপকার করা এমন একটি কাজ, যা অন্যকে উপকৃত করার পাশাপাশি নিজেকেও সমৃদ্ধ করে। তাই আমরা সবাইকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসা উচিত, কারণ এতে আমাদের সমাজ এবং নিজেদের জীবন উভয়ই সুন্দর হয়।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top