কিডনি বড় হলে কি হয়?

কিডনি বড় হওয়া বা কিডনি ফোলা একটি সাধারণ সমস্যা যা কিডনির কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি করে। এ সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হাইড্রোনেফ্রোসিস (Hydronephrosis) বলা হয়। কিডনি বড় হওয়া বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমন মূত্রনালীর প্রতিবন্ধকতা, পাথর বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে কিডনিতে চাপ তৈরি হওয়া। এ সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসার প্রয়োজন হয়, কারণ দীর্ঘমেয়াদী ফোলা কিডনির স্থায়ী ক্ষতি করতে পারে।

কিডনি বড় হওয়ার কারণ:

১. মূত্রনালীতে প্রতিবন্ধকতা (Urinary Obstruction):

মূত্রনালীর কোনো অংশে পাথর বা অন্যান্য কারণবশত বাধা সৃষ্টি হলে কিডনি থেকে মূত্র বের হতে পারে না। এর ফলে কিডনি ফুলে যায় এবং কিডনি বড় হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. কিডনিতে পাথর (Kidney Stones):

কিডনিতে পাথর থাকলে মূত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি হতে পারে এবং মূত্র কিডনিতে আটকে যায়। এর ফলে কিডনি ফুলে যায় এবং ব্যথা হতে পারে।

৩. প্রস্টেটের সমস্যা (Prostate Enlargement):

পুরুষদের প্রস্টেট গ্রন্থি বড় হলে মূত্রনালী সংকুচিত হতে পারে, যা মূত্র বের হওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করে। এর ফলে কিডনি ফুলে যায়।

৪. মূত্রনালীতে সংক্রমণ (Urinary Tract Infection):

মূত্রনালীর সংক্রমণ বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) কিডনিতে ছড়িয়ে পড়লে কিডনি ফুলে যেতে পারে এবং এর স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

৫. প্রসবের সময় চাপ (Pregnancy Pressure):

গর্ভাবস্থায় জরায়ুর আকার বৃদ্ধি পায়, যা মূত্রনালীর ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে মূত্র সঠিকভাবে বের হতে না পারায় কিডনি বড় হতে পারে।

৬. কোনও টিউমার (Tumor):

কিডনি বা মূত্রনালীর আশেপাশে কোনও টিউমার থাকলে এটি কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং কিডনির আকার বড় হতে পারে।

কিডনি বড় হওয়ার লক্ষণ:

১. পেটে ব্যথা: বিশেষ করে পেটের পাশের দিকে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত একপাশে বেশি থাকে।

২. মূত্রত্যাগে সমস্যা: মূত্রত্যাগে জ্বালা, অস্বস্তি বা মূত্র বের হতে সমস্যা হতে পারে। কখনও কখনও মূত্রের পরিমাণ কমে যায়।

৩. বমি এবং মাথা ঘোরা: কিডনির সমস্যার কারণে বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা এবং ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে।

৪. জ্বর: সংক্রমণজনিত কারণে জ্বর হতে পারে এবং এতে শরীরে দুর্বলতা আসতে পারে।

৫. রক্তমিশ্রিত মূত্র: কিডনি বড় হলে মূত্রে রক্ত দেখা দিতে পারে।

কিডনি বড় হলে করণীয়:

১. পর্যাপ্ত পানি পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা কিডনির কার্যক্রম ভালো রাখতে সহায়ক। পানি পান করলে মূত্রনালী পরিষ্কার থাকে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।

২. চিকিৎসকের পরামর্শ: কিডনি বড় হওয়া একটি গুরুতর সমস্যা হতে পারে, তাই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। কিডনি বড় হওয়ার সঠিক কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করা উচিত।

৩. প্রয়োজনীয় পরীক্ষা: আল্ট্রাসোনোগ্রাম বা অন্যান্য পরীক্ষা করে কিডনির আকার এবং সমস্যার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সঠিক চিকিৎসার জন্য এসব পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ওষুধ সেবন: সংক্রমণ বা পাথরের কারণে কিডনি বড় হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক বা পেইন কিলার ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।

৫. সার্জারি: যদি কিডনি বড় হওয়ার কারণ মূত্রনালীতে বাধা সৃষ্টি হয় বা পাথর বড় হয়, তবে অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। অপারেশনের মাধ্যমে পাথর সরানো হয় এবং কিডনির স্বাভাবিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু হয়।

কিডনি বড় হওয়ার ঝুঁকি এড়াতে করণীয়:

১. প্রচুর পানি পান: প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

২. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে কিডনির সমস্যাগুলি আগে থেকেই চিহ্নিত করা যায়।

৩. সুষম খাদ্যাভ্যাস: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস কিডনির কার্যক্রম সঠিক রাখে। লবণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খেলে কিডনির ওপর চাপ কম পড়ে।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top