চোখ মানবদেহের একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল অঙ্গ। চোখের সুস্থতা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপনকে সহজ করে তোলে। তবে বিভিন্ন কারণে আমাদের চোখে নানা ধরনের রোগ হতে পারে। নিম্নে কিছু সাধারণ ও গুরুতর চোখের রোগের নাম ও তার বিবরণ দেওয়া হলো:
১. মায়োপিয়া (Myopia):
মায়োপিয়া হলো দূরের বস্তু পরিষ্কারভাবে দেখতে অসুবিধা হওয়া। এটি দূরদৃষ্টির সমস্যার মতো একটি সাধারণ চোখের সমস্যা। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা কাছের বস্তু দেখতে পারেন, কিন্তু দূরের বস্তুর চিত্র অস্পষ্ট হয়।
২. হাইপারমেট্রোপিয়া (Hypermetropia):
এই রোগে আক্রান্তরা দূরের বস্তুর চেয়ে কাছের বস্তু দেখতে সমস্যা অনুভব করেন। এটিকে “দূরদৃষ্টি” বলা হয়। এই অবস্থায় চোখের বলটির আকার হ্রাস পাওয়ার ফলে সমস্যাটি সৃষ্টি হয়।
৩. অ্যাস্টিগম্যাটিজম (Astigmatism):
অ্যাস্টিগম্যাটিজম হলো চোখের কর্নিয়ার অনিয়মিত আকারের কারণে দৃষ্টিবিভ্রাট। এতে ব্যক্তি ঝাপসা বা বিকৃত দৃষ্টি অনুভব করেন, কারণ আলো সঠিকভাবে রেটিনায় পড়ে না।
৪. ক্যাটারাক্ট (Cataract):
ক্যাটারাক্ট হলো চোখের লেন্সে ছানি পড়ার সমস্যা। এর ফলে চোখের স্বচ্ছ লেন্সটি ধীরে ধীরে ঘোলাটে হয়ে যায় এবং দৃষ্টি ক্ষীণ হয়ে আসে। সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে ক্যাটারাক্টের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
৫. গ্লুকোমা (Glaucoma):
গ্লুকোমা একটি গুরুতর চোখের রোগ, যেখানে চোখের ভেতরের চাপ বেড়ে যায়। এই চাপের কারণে চোখের স্নায়ু (অপটিক নার্ভ) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যেতে পারে, এমনকি অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।
৬. কনজাংটিভাইটিস (Conjunctivitis):
কনজাংটিভাইটিস হলো চোখের কনজাংটিভা নামক অংশে প্রদাহ বা ইনফেকশন। এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, বা অ্যালার্জির কারণে হতে পারে। রোগটি সাধারণত চোখ লাল হওয়া, চুলকানি এবং চোখে পানি পড়ার মাধ্যমে প্রকাশ পায়।
৭. ড্রাই আই (Dry Eye):
ড্রাই আই হলো চোখে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা অশ্রু তৈরি না হওয়ার কারণে চোখ শুষ্ক হয়ে যাওয়া। এর ফলে চোখে চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং অসুবিধা অনুভব হয়। কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে দীর্ঘ সময় কাজ করলে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।
৮. রেটিনোপ্যাথি (Retinopathy):
রেটিনোপ্যাথি হলো রেটিনার ক্ষতি। এটি ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথির মতো ডায়াবেটিসের কারণে হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদী ডায়াবেটিস থাকলে চোখের রেটিনায় রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ করে দিতে পারে।
৯. এমব্লিওপিয়া (Amblyopia):
এমব্লিওপিয়া, যা “লেজি আই” নামেও পরিচিত, শিশুদের মধ্যে একটি সাধারণ চোখের সমস্যা। এ রোগে আক্রান্ত চোখে দৃষ্টিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এক চোখে কম দৃষ্টি পাওয়া যায়।
১০. কর্নিয়া আলসার (Corneal Ulcer):
কর্নিয়ায় ক্ষত সৃষ্টি হলে কর্নিয়া আলসার হয়। এটি ইনফেকশন, আঘাত বা চক্ষুশূলের কারণে হতে পারে। কর্নিয়া আলসার হলে চোখে তীব্র ব্যথা, লাল হওয়া, ঝাপসা দেখা এবং চোখ থেকে পানি পড়া দেখা যায়।
১১. রেটিনাল ডিটাচমেন্ট (Retinal Detachment):
রেটিনাল ডিটাচমেন্ট হলো রেটিনা তার স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যাওয়া। এটি দৃষ্টিশক্তি হারানোর ঝুঁকি বাড়ায় এবং দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরি।
১২. কালো চোখের দাগ (Macular Degeneration):
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে চোখের মাকুলা অংশে ক্ষতি হলে এই রোগ দেখা দিতে পারে। মাকুলা আমাদের দৃষ্টি ও ডিটেইল দেখার জন্য দায়ী। এর ক্ষতির ফলে কেন্দ্রীয় দৃষ্টি সমস্যা দেখা দেয়।
চোখের রোগ প্রতিরোধে কিছু পরামর্শ:
- নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করান।
- পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম নিন।
- দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে কাজ করলে চোখের বিশ্রাম নিন।
- চোখে পরিষ্কার জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
- প্রচুর সবুজ শাকসবজি এবং ফলমূল খান, যাতে চোখের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সরবরাহ হয়।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।