বুকের ডান পাশে চাপ অনুভব করা অনেকের জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। যদিও বুকের বাম পাশের ব্যথাকে প্রায়শই হৃদরোগের সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তবে বুকের ডান পাশেও ব্যথা হতে পারে এবং এটি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার কারণে ঘটে। সাধারণত ডান পাশের ব্যথা কম গুরুতর হয়, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।
বুকের ডান পাশে চাপ অনুভবের কারণ:
১. পেশির টান বা আঘাত:
বুকের পেশিতে আঘাত লাগলে বা বেশি টান পড়লে ডান পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ভারী কিছু তোলা, ব্যায়াম, বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাত এর কারণ হতে পারে।
২. গ্যাস বা বদহজম:
পেটে গ্যাস জমে গেলে বুকের ডান পাশের অংশে চাপ অনুভব হতে পারে। গ্যাসের কারণে বুকের পেশিগুলোতে চাপ পড়ে এবং এর ফলে ব্যথা বা অস্বস্তি হয়।
৩. অ্যাসিডিটি বা গ্যাস্ট্রিক:
অ্যাসিডিটির কারণে বুকের ডান পাশে চাপ অনুভব হতে পারে। পেটে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হলে তা বুকের দিকে উঠতে পারে, ফলে ব্যথা বা চাপের অনুভূতি হয়।
৪. ফুসফুসের সংক্রমণ:
ডান পাশের ফুসফুসে সংক্রমণ বা প্রদাহ (যেমন নিউমোনিয়া বা ব্রংকাইটিস) হলে ডান পাশে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। এর পাশাপাশি কাশি, শ্বাসকষ্ট বা জ্বর থাকতে পারে।
৫. পিত্তথলির পাথর বা প্রদাহ:
পিত্তথলিতে পাথর জমলে বা প্রদাহ হলে বুকের ডান পাশে চাপ বা ব্যথা অনুভূত হতে পারে। বিশেষ করে বেশি তেল-মসলা জাতীয় খাবার খেলে এই সমস্যা বাড়তে পারে।
৬. ফুসফুসে রক্ত জমাট:
ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধলে (পালমোনারি এম্বোলিজম) ডান পাশে ব্যথা হতে পারে। এটি একটি গুরুতর অবস্থা, এবং এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়ানি বা মাথা ঘোরা থাকতে পারে।
৭. কিডনির সংক্রমণ:
ডান পাশে কিডনির সংক্রমণ বা প্রদাহ হলে পেট এবং বুকের ডান পাশে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে। প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালা বা প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে।
বুকের ডান পাশে চাপ হলে করণীয়:
১. বিশ্রাম নিন:
প্রথমেই কিছু সময় বিশ্রাম নিন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন। যদি চাপ বা ব্যথা পেশির টান বা আঘাতের কারণে হয়, তাহলে বিশ্রাম নেওয়ায় তা কমে যেতে পারে।
২. গরম সেঁক:
বুকের ডান পাশে ব্যথা বা চাপ থাকলে হালকা গরম সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এটি পেশির টান কমাতে সহায়ক।
৩. হালকা খাবার খান:
যদি গ্যাস বা অ্যাসিডিটির কারণে বুকের ডান পাশে চাপ অনুভূত হয়, তাহলে হালকা খাবার খান। যেমন: শাক-সবজি, ফলমূল, বা সহজপাচ্য খাবার।
৪. নিয়মিত শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন:
শ্বাস-প্রশ্বাস অনুশীলন করলে বুকের চাপ কমে যেতে পারে। ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। এটি পেশির টান কমাতে সহায়ক।
৫. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড়ানি, জ্বর, বা মাথা ঘোরা থাকে, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে ফুসফুস বা কিডনির সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসা জরুরি হতে পারে।
বুকের ডান পাশে চাপ বা ব্যথা সাধারণত গ্যাস, পেশির টান, বা অ্যাসিডিটির কারণে হয়ে থাকে, যা খুব গুরুতর নয়। তবে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সময়মতো চিকিৎসা এবং সঠিক পদক্ষেপ নিলে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।