এইডসের লক্ষণ: কীভাবে সনাক্ত করবেন

এইডস (AIDS) বা অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রোম একটি মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ, যা এইচআইভি (HIV) ভাইরাসের মাধ্যমে হয়। এই ভাইরাসটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে ফেলে। এইডসের লক্ষণগুলি বেশ কয়েকটি ধাপে প্রকাশ পায়, তবে প্রাথমিকভাবে এটি শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। এইডসের লক্ষণগুলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তীব্র হয়, এবং যদি তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করা হয়, তবে তা জীবনহানির কারণ হতে পারে।

এইডসের লক্ষণগুলো কী কী?

এইডসের লক্ষণগুলো সাধারনত তিনটি প্রধান ধাপে বিভক্ত:

১. প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ (Acute HIV Infection)

এইচআইভি সংক্রমণের পর প্রাথমিক ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে শরীরে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেখা যায়, যা প্রায়ই ফ্লু বা জ্বরের মতো অনুভূত হয়। এই লক্ষণগুলি সংক্রমণের পর দ্রুত বিকশিত হয়। এর মধ্যে প্রধান লক্ষণগুলি হল:

  • জ্বর: হঠাৎ করে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়।
  • মাথাব্যথা: দীর্ঘমেয়াদী মাথাব্যথা অনুভূত হয়।
  • গলা ব্যথা: গলায় ব্যথা বা খুসখুস ভাব।
  • ফুসকুড়ি: শরীরের বিভিন্ন অংশে ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
  • মাংসপেশিতে ব্যথা: গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়।
  • গ্ল্যান্ড ফুলে যাওয়া: ঘাড়, বগল বা কুঁচকির লসিকা গ্রন্থি (lymph nodes) ফুলে যেতে পারে।
  • মাথা ঘোরা ও ক্লান্তি: অতিরিক্ত ক্লান্তি ও মাথা ঘোরার অনুভূতি।

    raju akon youtube channel subscribtion

২. নীরব পর্যায় (Asymptomatic HIV)

প্রাথমিক সংক্রমণের পর, অনেকদিন পর্যন্ত কোনো লক্ষণ দেখা নাও যেতে পারে। এই সময়ে ভাইরাসটি শরীরের মধ্যে ক্রমাগত ছড়িয়ে পড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধ্বংস করতে থাকে। এই নীরব অবস্থাটি কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

৩. অগ্রসর পর্যায়ের লক্ষণ (AIDS Stage)

এই পর্যায়ে পৌঁছালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পুরোপুরি দুর্বল হয়ে যায় এবং বিভিন্ন সংক্রমণ বা ক্যান্সার ধরা পড়ে। এইডসের অগ্রসর পর্যায়ের কিছু লক্ষণ হল:

  • দীর্ঘমেয়াদী জ্বর: একটানা উচ্চ তাপমাত্রা।
  • ওজন হ্রাস: হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া।
  • গভীর ক্লান্তি: দৈনন্দিন কাজ করতে প্রচণ্ড ক্লান্তি অনুভব করা।
  • নাইট সুয়েটিং (রাতের ঘাম): রাতে প্রচণ্ড ঘাম হওয়া।
  • ডায়রিয়া: দীর্ঘমেয়াদী পাতলা পায়খানা।
  • শ্বাসকষ্ট: শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া।
  • চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি বা দাগ: শরীরের বিভিন্ন স্থানে চামড়ায় ফুসকুড়ি বা দাগ দেখা দেয়।
  • মুখে বা গলায় সাদা দাগ: এটি ছত্রাক সংক্রমণের কারণে হতে পারে।
  • স্মৃতিশক্তি লোপ ও মানসিক সমস্যা: স্মৃতি হারানো এবং বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এইডস কীভাবে শনাক্ত করবেন?

এইডস সনাক্ত করার জন্য সাধারণত নিম্নলিখিত কিছু পরীক্ষা করা হয়:

  1. এইচআইভি অ্যান্টিবডি টেস্ট: রক্তে এইচআইভি অ্যান্টিবডি শনাক্ত করার মাধ্যমে এটি নির্ধারণ করা হয়।
  2. পিসিআর টেস্ট (PCR Test): রক্তের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাসের ডিএনএ বা আরএনএ খুঁজে পাওয়া হয়।
  3. সিডি ৪ টেস্ট (CD4 Test): রক্তের সিডি ৪ কোষের মাত্রা পরীক্ষা করে রোগের অগ্রসরতা নির্ণয় করা হয়।

এইডস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

এইডসের নিরাময় এখনো আবিষ্কার হয়নি, তবে সময়মতো চিকিৎসা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির জীবন দীর্ঘ করা সম্ভব। এআরটি (Antiretroviral Therapy) একটি গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা পদ্ধতি যা এইচআইভি ভাইরাসের বৃদ্ধি কমিয়ে রোগের অগ্রগতি ধীর করতে সাহায্য করে।

এইডস একটি গুরুতর রোগ, তবে প্রাথমিক অবস্থায় এইচআইভি শনাক্ত করা গেলে এবং সঠিক চিকিৎসা নিলে রোগী সুস্থ জীবনযাপন করতে পারেন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top