মুখে অতিরিক্ত পানি আসা, যাকে আমরা সাধারণত লালা বা স্যালাইভেশন বৃদ্ধি হিসেবে জানি, এটি একটি সাধারণ শারীরিক প্রতিক্রিয়া। মুখে অতিরিক্ত লালা তৈরি হওয়ার ফলে মুখে অতিরিক্ত পানি আসে। যদিও এটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার অংশ, তবে কখনও কখনও বিভিন্ন কারণে মুখে অতিরিক্ত পানি আসতে পারে। এটি শরীরের বিভিন্ন সমস্যা বা অবস্থার ইঙ্গিতও হতে পারে।
এই প্রবন্ধে মুখে পানি আসার কারণ এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মুখে পানি আসার কারণ
১. খাবারের প্রতি আকর্ষণ
খাবার দেখলে বা খাবারের গন্ধ পেলে আমাদের মুখের স্যালাইভারি গ্ল্যান্ড থেকে লালা নিঃসরণ বৃদ্ধি পায়, যা মুখে পানির অনুভূতি সৃষ্টি করে। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
২. অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
অতিরিক্ত অম্লতা বা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগলে মুখে পানি আসতে পারে। যখন পাকস্থলীতে অ্যাসিড বেশি হয়, তখন এর প্রভাব মুখের লালা নিঃসরণে পড়ে।
৩. দাঁতের বা মুখের সমস্যা
মুখের কোনো ইনফেকশন, দাঁতের ক্ষয়, দাঁতের ফোঁড়া, বা মাড়ির রোগের কারণে মুখে অতিরিক্ত লালা তৈরি হতে পারে।
৪. গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থার শুরুর দিকে অনেক মহিলার মুখে অতিরিক্ত পানি আসতে পারে, যা সাধারণত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ঘটে।
৫. স্বাস্থ্য সমস্যা
কিছু স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে, যেমন প্যারকিনসন্স রোগ বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যার কারণে মুখে অতিরিক্ত লালা আসতে পারে।
৬. মেডিসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও মুখে লালা বেশি নিঃসৃত হতে পারে। বিশেষ করে, পেটের সমস্যা বা মানসিক অসুস্থতার ওষুধে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৭. মানসিক চাপ বা উত্তেজনা
মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা উত্তেজনা থাকলে মুখে অতিরিক্ত পানি আসতে পারে। বিশেষ করে, পরীক্ষার সময় বা উদ্বেগজনিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে।
মুখে পানি আসার প্রতিকার
১. লবণ পানি দিয়ে কুলি করা
যদি মুখে অতিরিক্ত পানি আসে, তাহলে লবণ পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি মুখের লালা কমাতে সহায়ক হবে এবং মুখের ইনফেকশনও প্রতিরোধ করবে।
২. অ্যান্টাসিড খাওয়া
যদি গ্যাস্ট্রিক বা অম্লতার কারণে মুখে পানি আসে, তাহলে অ্যান্টাসিড ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করা উচিত।
৩. দাঁতের যত্ন নেওয়া
দাঁতের কোনো সমস্যা থাকলে, যেমন দাঁতের ক্ষয়, ইনফেকশন বা মাড়ির রোগ, তাহলে দন্ত চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দাঁতের সঠিক যত্ন নিতে হবে। দাঁত ব্রাশ করা, ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করা, এবং নিয়মিত মাড়ির যত্ন নেওয়া জরুরি।
৪. গরম পানির সেঁক
যদি মুখে পানির সমস্যা মুখের স্নায়ু বা পেশীর কোনো সমস্যার কারণে হয়, তাহলে গরম পানির সেঁক দেওয়া যেতে পারে। এটি লালার নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে।
৫. হালকা খাবার খাওয়া
গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থাকলে ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন এবং সহজপাচ্য ও হালকা খাবার খান। অম্লতা কমাতে শাকসবজি ও ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
৬. মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা উত্তেজনা থাকলে নিয়মিত যোগব্যায়াম, ধ্যান, বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এগুলো মানসিক চাপ কমিয়ে মুখের অতিরিক্ত লালা নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
৭. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
যদি ওষুধের কারণে মুখে পানি আসে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি আপনাকে ওষুধ পরিবর্তন বা ডোজ কমানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
মুখে অতিরিক্ত পানি আসা সাধারণত তেমন কোনো গুরুতর সমস্যা নয়, তবে যদি এটি দীর্ঘদিন ধরে স্থায়ী হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রাথমিক যত্ন এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে মুখের লালা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। দাঁতের সঠিক যত্ন নেওয়া, হালকা খাবার খাওয়া এবং মানসিক চাপ কমানোর মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।