প্রস্রাবে ফেনা হওয়ার কারণ ও প্রতিকার

প্রস্রাবে ফেনা দেখা দেওয়া একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এটি কখনো কখনো স্বাস্থ্যের বড় কোনো সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সাধারণত, কিছু পরিস্থিতিতে প্রস্রাবে ফেনা হতে পারে যা কোনো ক্ষতিকর নয়। তবে, যদি এটি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বারবার ঘটে, তাহলে আপনার স্বাস্থ্য নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। প্রস্রাবে ফেনা হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে এবং প্রতিকারও নির্ভর করে তার প্রকৃত কারণের উপর।

প্রস্রাবে ফেনা হওয়ার কারণ

১. শারীরিক চাপ বা দ্রুত প্রস্রাব করা: যখন কেউ খুব দ্রুত প্রস্রাব করে বা শারীরিক চাপ থাকে, তখন মূত্র প্রবাহের গতি বেশি হয় এবং প্রস্রাবে ফেনা দেখা দিতে পারে। এটি স্বাভাবিক এবং কোনো সমস্যার কারণ নয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. প্রোটিনিউরিয়া (Proteinuria): প্রস্রাবে বেশি পরিমাণে প্রোটিন নিঃসরণ হলে ফেনা তৈরি হতে পারে। প্রোটিনিউরিয়া সাধারণত কিডনির সমস্যা নির্দেশ করে, বিশেষ করে নেফ্রোটিক সিনড্রোম বা কিডনির অসুখের লক্ষণ হতে পারে।

৩. ডিহাইড্রেশন: শরীরে পানির অভাব হলে প্রস্রাব ঘন হয় এবং এতে ফেনা দেখা দিতে পারে। পর্যাপ্ত পানি না পান করলে প্রস্রাবের রঙও ঘন হয়।

৪. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI): প্রস্রাবের ফেনা কোনো সংক্রমণের (ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন) লক্ষণ হতে পারে। UTI হলে প্রস্রাবে ফেনার পাশাপাশি জ্বালাপোড়া, ব্যথা এবং দুর্গন্ধও হতে পারে।

৫. ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন: দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কিডনির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে, যার ফলে প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ফেনা দেখা দেয়।

৬. হেপাটিক বা লিভারের সমস্যা: কিছু লিভার বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা থেকেও প্রস্রাবে ফেনা হতে পারে, কারণ শরীরের বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের সমস্যা হলে ফেনা তৈরি হয়।

প্রস্রাবে ফেনা হলে করণীয়

১. পানি পান বাড়ান: ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পেতে বেশি পানি পান করুন। প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে প্রস্রাবের ঘনত্ব কমবে এবং ফেনা কমবে।

২. প্রোটিনের গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করুন: যদি আপনার ডায়েটে অতিরিক্ত প্রোটিন থাকে, তাহলে সেটি সীমিত করুন। বেশি প্রোটিন গ্রহণ করলে প্রস্রাবে ফেনা দেখা দিতে পারে।

৩. কিডনি পরীক্ষা করান: দীর্ঘদিন ধরে প্রস্রাবে ফেনা থাকলে ডাক্তার দ্বারা কিডনির পরীক্ষা করানো উচিত। কিডনির সমস্যা বা প্রোটিনিউরিয়া থাকলে ডাক্তার সঠিক চিকিৎসা প্রদান করবেন।

৪. ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের (UTI) চিকিৎসা: যদি প্রস্রাবের সাথে জ্বালা বা ব্যথা থাকে, তাহলে ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের পরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। UTI এর চিকিৎসার জন্য এন্টিবায়োটিক দেওয়া হতে পারে।

৫. ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশন থাকলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। নিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ কিডনির স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

৬. নিয়মিত চেকআপ করান: যদি প্রস্রাবে ফেনা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ দেখা দেয় (যেমন শরীরে পানি জমে যাওয়া, ক্লান্তি), তাহলে ডাক্তার দ্বারা নিয়মিত চেকআপ করা উচিত।

চিকিৎসা নেওয়ার সময়

  • যদি প্রস্রাবে ফেনা দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং বাড়িতে চিকিৎসা করলে সমাধান না হয়।
  • যদি প্রস্রাবের সাথে অন্য কোনো লক্ষণ থাকে, যেমন ব্যথা, জ্বালাপোড়া, বা দুর্গন্ধ।
  • যদি ডায়াবেটিস বা হাইপারটেনশনের লক্ষণ থাকে।
  • যদি শরীরে অতিরিক্ত পানি জমা হয় বা ফুলে যায়।

প্রস্রাবে ফেনা হওয়া সবসময়ই গুরুতর কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ নাও হতে পারে। তবে, যদি এটি দীর্ঘমেয়াদী হয় বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তখন অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, এবং নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে প্রস্রাবে ফেনা হওয়ার সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top