চোখ মুখ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ ও করণীয়

চোখ এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া একটি সাধারণ সমস্যা যা বিভিন্ন কারণের জন্য হতে পারে। এটি কোনো বিশেষ শারীরিক সমস্যা বা শরীরে পানিশূন্যতা থেকে শুরু করে আরও জটিল সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যার প্রকৃতি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। চোখ মুখ শুকিয়ে গেলে জীবনের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হয় এবং অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তাই সমস্যাটি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও করণীয় পদক্ষেপ জানা দরকার।

চোখ মুখ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ

১. ডিহাইড্রেশন (Dehydration): শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি না থাকলে চোখ ও মুখ শুকিয়ে যেতে পারে। পানির অভাবে লালা উৎপাদন কমে যায় এবং চোখের ত্বকও শুষ্ক হয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ড্রাই আই সিন্ড্রোম (Dry Eye Syndrome): চোখের জল উৎপাদন বা লুব্রিকেশন কমে গেলে চোখে শুষ্কতা দেখা দেয়। দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের সামনে কাটালে বা চোখের সঠিক যত্ন না নিলে এই সমস্যা হতে পারে।

৩. মেডিকেশন বা ওষুধের প্রভাব: কিছু ওষুধ, বিশেষ করে এন্টিহিস্টামিন, ডায়ুরেটিক্স এবং এন্টিডিপ্রেসেন্ট ব্যবহার করলে মুখের লালা কমে যায় এবং চোখ শুকিয়ে যায়।

৪. হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজের সময় বা হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে মুখ ও চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।

৫. আর্দ্রতার অভাব: শীতকালে বা বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকলে চোখ ও মুখে শুষ্কতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত এসি বা হিটারের ব্যবহারও এই শুষ্কতার কারণ হতে পারে।

৬. রোগ বা স্বাস্থ্যের সমস্যা: কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন ডায়াবেটিস, শোগ্রেন সিনড্রোম, এবং অটোইমিউন ডিজিজ চোখ ও মুখ শুকিয়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে।

৭. অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: পুষ্টির অভাব, বিশেষ করে ভিটামিন এ, সি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকলে শরীরের লুব্রিকেশন সঠিকভাবে হয় না এবং শুষ্কতার সৃষ্টি হয়।

চোখ ও মুখ শুকিয়ে গেলে করণীয়

১. পানি পান বৃদ্ধি করুন: শরীরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। পানি পান শরীরের লুব্রিকেশন বাড়াতে সাহায্য করে।

২. চোখের সঠিক যত্ন নিন: দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে প্রতি ২০ মিনিট পর কিছু সময়ের জন্য বিরতি নিন। চোখে কৃত্রিম লুব্রিকেশন বা আই ড্রপ ব্যবহার করে শুষ্কতা দূর করতে পারেন।

৩. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন: পুষ্টিকর খাবার, বিশেষত ভিটামিন এ এবং ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার (যেমন মাছ, বাদাম, শাকসবজি) খাওয়া শুষ্কতা কমাতে সহায়ক।

৪. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন: কোনো ওষুধের কারণে শুষ্কতা হলে আপনার চিকিৎসকের সাথে কথা বলে বিকল্প ওষুধ বা ডোজ সমন্বয় করতে পারেন।

৫. আর্দ্রতা বজায় রাখুন: বাড়িতে আর্দ্রতা বজায় রাখতে হিউমিডিফায়ার ব্যবহার করতে পারেন, যা বাতাসের শুষ্কতা কমিয়ে চোখ ও মুখের শুষ্কতা রোধ করতে সহায়ক হবে।

৬. মেডিকেল পরীক্ষা করান: যদি শুষ্কতা ক্রমাগত হয় এবং ঘরোয়া পদক্ষেপে সমাধান না আসে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। শুষ্কতা গুরুতর হলে ডাক্তার চোখের ড্রপ বা বিশেষ ধরনের ওষুধ দিতে পারেন।

৭. প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন: চোখের শুষ্কতা দূর করার জন্য কোল্ড কম্প্রেস ব্যবহার করা যেতে পারে। মুখের শুষ্কতা কমানোর জন্য লেবু পানি, টকদই বা অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান খাওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন নিবেন?

  • যদি শুষ্কতা দীর্ঘদিন ধরে থাকে এবং স্বাভাবিক উপায়ে সমাধান না হয়।
  • চোখে বা মুখে ব্যথা অনুভব করেন।
  • চোখ থেকে অতিরিক্ত পানি পড়ছে, যা শুষ্কতার লক্ষণ হতে পারে।
  • মুখে বা চোখে সংক্রমণ অনুভব করলে।
  • কোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষণ মনে হলে।

চোখ ও মুখ শুকিয়ে যাওয়া শরীরের সাধারণ প্রক্রিয়ার একটি সমস্যা হতে পারে, তবে কখনো কখনো এটি বড় কোনো শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। পানিশূন্যতা এড়িয়ে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রেখে, এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে এই সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব। সঠিক পদক্ষেপ নিলে চোখ ও মুখের শুষ্কতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং দৈনন্দিন জীবন স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।

📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top