গর্ভাবস্থার সময় বাচ্চার নড়াচড়া অনুভব করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংকেত, যা বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করে। সাধারণত ১৮ থেকে ২৫ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভবতী মা বাচ্চার প্রথম নড়াচড়া অনুভব করেন। বাচ্চার নড়াচড়ার তীব্রতা এবং সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে মা বুঝতে পারেন যে বাচ্চা কতটা সক্রিয়। তবে যদি কোনো কারণে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যায়, তা মা ও শিশুর জন্য উদ্বেগজনক হতে পারে। এ অবস্থায় সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া কমে যাওয়ার কারণসমূহ:
১. বাচ্চার ঘুমানো
গর্ভের বাচ্চারা দিনে প্রায় ২০-৪০ মিনিট ঘুমিয়ে থাকে। এ সময় বাচ্চার নড়াচড়া বন্ধ থাকে, যা স্বাভাবিক।
২. মায়ের শারীরিক ক্লান্তি
গর্ভাবস্থায় মায়ের শারীরিক ক্লান্তি বা স্ট্রেস বাচ্চার নড়াচড়া কম হওয়ার একটি কারণ হতে পারে।
৩. খাবারের অভাব
মায়ের শরীরে পুষ্টির অভাব থাকলে বাচ্চার নড়াচড়া কমে যেতে পারে।
৪. প্রত্যাবর্তন সময় (Growth spurts)
গর্ভাবস্থার নির্দিষ্ট সময়গুলোতে বাচ্চারা নির্দিষ্ট পরিমাণে বাড়ে। এই সময়গুলোতে বাচ্চার নড়াচড়া সাময়িকভাবে কমে যেতে পারে।
৫. গর্ভের পানি কমে যাওয়া
যদি গর্ভের পানি (অ্যামনিওটিক ফ্লুইড) কমে যায়, তবে বাচ্চার নড়াচড়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বাচ্চার নড়াচড়া কমে গেলে করণীয়:
১. খাদ্য গ্রহণের পর নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ
যদি বাচ্চার নড়াচড়া কম মনে হয়, তবে খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিন। অনেক সময় মায়ের খাবার গ্রহণের পর বাচ্চা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
২. বাম দিকে শুয়ে থাকা
বাম দিকে শুয়ে থেকে বাচ্চার নড়াচড়া পরিমাপ করা উচিত। এই অবস্থানে থাকলে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়, যা বাচ্চার নড়াচড়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
৩. ঠান্ডা পানীয় পান
ঠান্ডা বা চিনি যুক্ত পানীয় পান করলে বাচ্চা মাঝে মাঝে বেশি সক্রিয় হতে পারে। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষা করে বাচ্চার নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করুন।
৪. হালকা ব্যায়াম
গর্ভাবস্থায় হালকা ব্যায়াম করলে বাচ্চা নড়াচড়া করতে পারে। তবে ব্যায়াম শুরুর আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৫. নড়াচড়ার সংখ্যা গণনা
বাচ্চার নড়াচড়া গুনতে চেষ্টা করুন। সাধারণত এক ঘণ্টায় ৫-১০টি নড়াচড়া থাকা উচিত। যদি ২ ঘণ্টায় ১০ বারের কম নড়াচড়া হয়, তবে তা উদ্বেগজনক হতে পারে।
৬. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
যদি উপরের পদ্ধতিগুলোর পরও বাচ্চার নড়াচড়া কম মনে হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসক আল্ট্রাসাউন্ড বা অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে বাচ্চার অবস্থা যাচাই করবেন।
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার নড়াচড়া মায়ের জন্য একটি স্বস্তির অনুভূতি নিয়ে আসে। তবে যদি নড়াচড়া কম মনে হয়, তবে তা অবহেলা না করে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নিয়মিতভাবে বাচ্চার নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ করা এবং যেকোনো অস্বাভাবিকতা অনুভব করলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া গর্ভাবস্থার নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।