শরীরে পানি আসার কারণ ও প্রতিকার

শরীরে পানি আসা বা পানি জমা (Edema) হলো এক ধরনের শারীরিক সমস্যা, যেখানে শরীরের বিভিন্ন স্থানে অস্বাভাবিকভাবে পানি জমতে থাকে। এটি সাধারণত পায়ে, হাতে, মুখে বা শরীরের অন্যান্য অংশে ফোলা সৃষ্টি করে। শরীরে পানি জমার অনেক কারণ থাকতে পারে, যেমন হৃদরোগ, কিডনির সমস্যা, লিভারের সমস্যা, কিংবা অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতা। এই সমস্যাটি একা নয়, বরং শারীরিক অবস্থার একটি লক্ষণ হতে পারে।

শরীরে পানি আসার কারণ

১. হৃদযন্ত্রের সমস্যা (Heart Failure)

যখন হৃদযন্ত্র ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হয় না। এতে শরীরে পানি জমা হতে পারে, বিশেষত পায়ে ও টাকনুতে ফোলা দেখা দেয়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. কিডনির সমস্যা

কিডনি শরীর থেকে বাড়তি পানি এবং লবণ নিঃসরণ করে। কিডনি যদি ঠিকমতো কাজ না করে, তবে শরীরে বাড়তি পানি জমতে শুরু করে। কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে শরীরে পানি জমে যাওয়া অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।

৩. লিভারের অসুস্থতা (Cirrhosis)

লিভারের অসুস্থতা বা সিরোসিসের কারণে শরীরে পানি জমতে পারে। এতে সাধারণত পেটের মধ্যে পানি জমা হয়, যা অ্যাসাইটিস (Ascites) নামে পরিচিত।

৪. হরমোনের পরিবর্তন

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, বিশেষত গর্ভাবস্থায়, মাসিকের আগে বা মেনোপজের সময় শরীরে পানি জমা হতে পারে। হরমোনের ওঠা-নামার কারণে শরীরে লবণ ও পানির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়।

৫. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া

অতিরিক্ত লবণ খেলে শরীরে সোডিয়াম বেড়ে যায়, যা শরীরে পানি ধরে রাখতে সহায়তা করে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমতে পারে।

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, হরমোন ওষুধ, উচ্চ রক্তচাপের জন্য ব্যবহৃত কিছু ওষুধ শরীরে পানি জমার কারণ হতে পারে।

৭. লসিকা সঞ্চালন সমস্যা (Lymphedema)

লসিকা সঞ্চালন ব্যবস্থায় যদি সমস্যা হয়, তবে শরীরে পানি জমা হতে পারে। এটি প্রায়শই হাতে বা পায়ে দেখা দেয় এবং ক্যান্সারের চিকিৎসার পর এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

শরীরে পানি আসার প্রতিকার

১. লো সোডিয়াম ডায়েট মেনে চলা

শরীরে পানি জমা রোধ করতে খাবারে লবণ কমাতে হবে। প্রতিদিনের খাবারে লবণের মাত্রা কমিয়ে দিলে শরীরে পানির জমা কমে আসবে। প্রক্রিয়াজাত খাবার এবং অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।

২. নিয়মিত শরীরচর্চা করা

শরীরচর্চা রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো করতে সাহায্য করে, যা শরীরে জমে থাকা পানির পরিমাণ কমিয়ে দেয়। বিশেষত হাঁটা, সাইক্লিং এবং সাঁতার শরীরের পানি সঞ্চালন ভালো রাখে।

৩. পায়ের উঁচুতে রাখা

যদি পায়ে বা টাকনুতে পানি জমে থাকে, তবে পা উপরের দিকে তুলে রাখা যেতে পারে। এতে রক্ত ও পানি সঞ্চালন ঠিকমতো হয় এবং ফোলা কমে যায়।

৪. সঠিক ওষুধ ব্যবহার

কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডিউরেটিক ওষুধ (Diuretics) ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ধরনের ওষুধ শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের করতে সাহায্য করে। তবে, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়।

৫. আরামদায়ক কাপড় পরা

যারা পানি জমার সমস্যায় ভোগেন, তারা আঁটসাঁট কাপড় এড়িয়ে চলা উচিত। আরামদায়ক এবং সঠিক সাইজের কাপড় পরলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং পানি জমা রোধ করা যায়।

৬. পানির সঠিক মাত্রা গ্রহণ

যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করলে শরীরের জলবিনিময় প্রক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে। এটি শরীরের পানি জমা রোধে সহায়ক হতে পারে।

৭. ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া

যদি পানি জমা সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং নিজে নিজে সমাধান না হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডাক্তারের মাধ্যমে সমস্যার সঠিক কারণ নির্ণয় করে তার ভিত্তিতে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

কবে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?

  • যদি শরীরের কোনো অংশ অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়।
  • শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভূত হয়।
  • পেটের মধ্যে অস্বাভাবিক ফোলা দেখা দেয়।
  • দীর্ঘমেয়াদী কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ফোলা দেখা যায়।

উপসংহার

শরীরে পানি জমা সাধারণত অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। সঠিক সময়ে এর প্রতিকার গ্রহণ করলে সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। লবণ কমানো, শরীরচর্চা করা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরে পানি জমা কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে। তবে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top