ফলিক এসিড বা ফোলেট হলো ভিটামিন বি-৯ এর একটি রূপ, যা আমাদের শরীরে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত, গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড শরীরের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি ডিএনএ গঠনে, কোষ বিভাজন এবং সঠিকভাবে বাচ্চার বৃদ্ধিতে সহায়ক। ফলিক এসিডের ঘাটতি হলে অ্যানিমিয়া, ক্লান্তি, মাথাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। অনেক ফলেই প্রাকৃতিকভাবে ফলিক এসিড বিদ্যমান, যা আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ফলিক এসিড সমৃদ্ধ ফল
১. কমলালেবু
কমলালেবু এবং অন্যান্য সাইট্রাস ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে। একটি মাঝারি আকারের কমলালেবুতে প্রায় ৩০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড থাকে, যা দৈনিক চাহিদার ৭-৮% পূরণ করতে পারে।
২. পেঁপে
পেঁপে একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ফল, এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে। পাকা পেঁপেতে ফলিক এসিডের পাশাপাশি ভিটামিন এ ও সি প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান, যা শরীরের জন্য উপকারী।
৩. কলা
কলা একটি জনপ্রিয় ফল, যা পটাসিয়ামের পাশাপাশি ফলিক এসিডের একটি ভালো উৎস। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কলা অন্তর্ভুক্ত করলে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।
৪. আঙুর
আঙুরে প্রচুর পরিমাণে ফোলেট থাকে, যা শরীরে ফলিক এসিডের অভাব পূরণে সাহায্য করে। এছাড়া আঙুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে, যা শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. অ্যাভোকাডো
অ্যাভোকাডো ফলিক এসিডের অন্যতম সমৃদ্ধ উৎস। একটি মাঝারি আকারের অ্যাভোকাডোতে প্রায় ৮১ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড থাকে, যা দৈনিক প্রয়োজনের ২০% পর্যন্ত পূরণ করতে পারে।
৬. স্ট্রবেরি
স্ট্রবেরি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ফল। এতে ফলিক এসিডসহ ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৭. আনারস
আনারসে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে, যা গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত উপকারী। এছাড়া আনারস হজমে সহায়ক এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।
৮. আম
আম হলো বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল, এবং এতে ভিটামিন এ, সি ও ফলিক এসিড রয়েছে। গর্ভাবস্থায় আম খেলে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণে সহায়ক হয়।
৯. কিউই
কিউইতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড এবং ভিটামিন সি থাকে। এটি অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে সহায়তা করে।
১০. জলপাই
জলপাইয়ে প্রাকৃতিকভাবে ফলিক এসিড রয়েছে, যা আমাদের শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি পুষ্টি চাহিদা পূরণে সহায়ক একটি ফল।
ফলিক এসিড কেন গুরুত্বপূর্ণ?
- রক্ত উৎপাদন: ফলিক এসিড লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর অভাবে অ্যানিমিয়া হতে পারে।
- গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে ফলিক এসিড গর্ভের শিশুর সঠিক বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়ক হয় এবং স্নায়ুর টিউবের ত্রুটি রোধ করতে সাহায্য করে।
- ডিএনএ গঠন: ফলিক এসিড ডিএনএ এবং অন্যান্য জেনেটিক উপাদান তৈরি করতে সাহায্য করে, যা শরীরের কোষের বৃদ্ধিতে সহায়ক।
- হৃদরোগ প্রতিরোধ: ফলিক এসিডের পর্যাপ্ত মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।
ফলিক এসিডের দৈনিক চাহিদা
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিডের প্রয়োজন হয়।
- গর্ভবতী নারীদের জন্য প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড প্রয়োজন।
উপসংহার
ফলিক এসিড শরীরের সঠিক বৃদ্ধির জন্য এবং গর্ভাবস্থায় বিশেষত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিভিন্ন ফলের মাধ্যমে সহজেই পাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফলিক এসিড সমৃদ্ধ ফল অন্তর্ভুক্ত করা আমাদের শরীরের জন্য অপরিহার্য।