বাচ্চার জন্মের পর প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ হলো শিশুর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার। বুকের দুধে থাকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য। তবে কখনো কখনো মা পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করতে পারেন না, অথবা শিশুটি বুকের দুধ পান করতে অস্বীকৃতি জানায়। এ ধরনের সমস্যার সমাধান করা খুবই জরুরি, যাতে বাচ্চার সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়। এই সমস্যা সমাধানে কিছু করণীয় পদক্ষেপ রয়েছে, যা মায়েরা সহজেই অনুসরণ করতে পারেন।
বাচ্চা বুকের দুধ না পেলে করণীয় পদক্ষেপ:
১. মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
মায়ের দুধ উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও সুষম খাবার খুবই জরুরি। প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুধ, ডিম, মাছ, মাংস, সবজি, ও ফলমূল গ্রহণ করা উচিত। দুধ উৎপাদনের জন্য পানি এবং তরল খাবারের পরিমাণও বাড়াতে হবে।
২. নিয়মিত স্তন্যপান করানো
নিয়মিত এবং পর্যাপ্ত সময় ধরে শিশুকে স্তন্যপান করাতে হবে। এর ফলে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং শিশুর বুকের দুধ পান করার অভ্যাস তৈরি হয়। এছাড়া, শিশুকে উভয় স্তন থেকে দুধ পান করানো জরুরি, যাতে দুধ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে।
৩. স্তনের ম্যাসাজ
স্তনে হালকা ম্যাসাজ করলে দুধের প্রবাহ বৃদ্ধি পায়। প্রতিবার দুধ পান করার আগে বা পরে স্তনে হালকা হাতে ম্যাসাজ করা যেতে পারে। এটি দুধ উৎপাদনে সহায়ক এবং বাচ্চা সহজে দুধ পেতে পারে।
৪. বিশেষ ল্যাক্টেশন চা ও খাবার
অনেক ধরনের ল্যাক্টেশন চা এবং বিশেষ খাবার আছে, যা দুধ উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক। যেমন ফেনুগ্রিক (মেথি), সিসমি সিডস (তিল), ওটমিল, পালং শাক ইত্যাদি। এগুলি মায়ের খাদ্যতালিকায় যোগ করলে দুধ উৎপাদন বাড়তে পারে।
৫. স্তনের দুধ পাম্প করা
যদি বাচ্চা সরাসরি স্তন্যপান না করে, তবে স্তনের দুধ পাম্প করে ফিডারে ভরে বাচ্চাকে খাওয়ানো যেতে পারে। এতে দুধ নষ্ট হবে না এবং শিশুও প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে।
৬. মায়ের মানসিক চাপ কমানো
মায়ের মানসিক চাপের কারণে দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে। তাই মায়ের মানসিক চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ, এবং পরিবারের সাপোর্ট থাকা জরুরি। মায়ের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হলে দুধ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকবে।
৭. ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ
যদি মায়ের দুধ একেবারেই না আসে, তবে অবশ্যই একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার প্রয়োজনীয় ওষুধ ও পরামর্শ দিতে পারেন, যা দুধ উৎপাদনে সহায়ক হতে পারে।
৮. বিকল্প দুধের ব্যবস্থা
যদি মায়ের দুধ একেবারেই পর্যাপ্ত না হয়, তবে ডাক্তার নির্ধারিত বিকল্প দুধ ব্যবহার করতে হবে। তবে এটি শুধুমাত্র শেষ পর্যায়ের ব্যবস্থা হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, কারণ বুকের দুধই শিশুর জন্য সর্বোত্তম পুষ্টির উৎস।
বুকের দুধ না পাওয়ার কারণসমূহ:
- মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রাম বা পুষ্টির অভাব।
- মানসিক চাপ বা উদ্বেগ।
- কিছু বিশেষ স্বাস্থ্য সমস্যা বা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা।
- শিশুর বুকের দুধ পান করতে অনীহা।
- স্তনের সঠিকভাবে দুধ উৎপাদন না হওয়া।
উপসংহার:
বাচ্চার জন্য বুকের দুধ হলো সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার। যদি কোনো কারণে শিশুকে পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাওয়া না যায়, তবে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে মায়ের দুধ উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব। নিয়মিত স্তন্যপান, সুষম খাদ্য, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণের মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধান করা যেতে পারে।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।