কোন ভিটামিনের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়: কারণ ও প্রতিকার

মেজাজ খিটখিটে হওয়া বা আচরণে হঠাৎ পরিবর্তন অনেক সময় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের মানসিক চাপের ফলে ঘটে। তবে কিছু বিশেষ ভিটামিনের অভাবও মেজাজ খিটখিটে হওয়ার কারণ হতে পারে। শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিনের ঘাটতি মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং অনেক ক্ষেত্রে মনোভাব নেতিবাচক হয়ে যেতে পারে।

কোন ভিটামিনের অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়?

১. ভিটামিন বি কমপ্লেক্স (Vitamin B Complex)

ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রুপের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি১, বি২, বি৩, বি৬, বি৯ (ফোলেট) এবং বি১২। এগুলি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়।

  • ভিটামিন বি৬ (Pyridoxine): মেজাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি শরীরে সেরোটোনিন, ডোপামিন এবং গামা-অ্যামিনোবিউটেরিক অ্যাসিড (GABA) তৈরি করতে সাহায্য করে, যা মেজাজ উন্নত করতে সহায়ক।
  • ভিটামিন বি১২: ভিটামিন বি১২-এর অভাব হলে মানসিক অবসাদ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। এটি স্নায়ুতন্ত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং মস্তিষ্কের সঠিক কার্যক্রমে সহায়ক।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ভিটামিন ডি (Vitamin D)

ভিটামিন ডি শরীরে শুধুমাত্র হাড় ও দাঁতের জন্যই নয়, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি হলে হতাশা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া এবং মানসিক অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, সূর্যের আলো কম পেলে এবং ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে মেজাজ খারাপ হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

৩. ভিটামিন সি (Vitamin C)

ভিটামিন সি শুধুমাত্র শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য নয়, মেজাজ নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। এর অভাবে বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন সি শরীরে এন্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।

৪. ম্যাগনেসিয়াম (Magnesium)

যদিও এটি ভিটামিন নয়, ম্যাগনেসিয়াম একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে মেজাজ খিটখিটে হওয়া, উদ্বেগ এবং অবসাদ দেখা দিতে পারে। এটি শরীরের নার্ভ ও পেশির কার্যক্রমে সহায়ক এবং মস্তিষ্কে রিলাক্সিং হরমোনের নিঃসরণে ভূমিকা রাখে।

মেজাজ খিটখিটে হওয়ার অন্যান্য কারণ

  • মানসিক চাপ ও উদ্বেগ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মেজাজ খিটখিটে করে তুলতে পারে।
  • ঘুমের অভাব: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয় এবং মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।
  • পুষ্টিহীন খাদ্যাভ্যাস: সুষম খাদ্য না খেলে এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিনের অভাব হলে মেজাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
  • হরমোনের পরিবর্তন: বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিক চক্রের সময় হরমোনের পরিবর্তন মেজাজের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

মেজাজ খিটখিটে হওয়া কমানোর উপায়

১. সুষম খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা

প্রতিদিনের খাবারে প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, শস্য এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন। এই ধরনের খাবারে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি এবং ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা সঠিক থাকে, যা মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

২. পর্যাপ্ত সূর্যালোক গ্রহণ করা

ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতিদিন কিছুক্ষণ সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসা উচিত। সূর্যের আলো থেকে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

৩. প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা

যদি খাদ্যাভ্যাস থেকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান পাওয়া না যায়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা যেতে পারে।

৪. নিয়মিত ব্যায়াম

নিয়মিত ব্যায়াম শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়, যা মেজাজ উন্নত করতে সহায়ক। হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম বা হালকা শারীরিক অনুশীলন মেজাজ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

৫. মানসিক চাপ কমানোর কৌশল

মেডিটেশন, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং রিলাক্সেশন টেকনিক মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এভাবে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার সময়

  • যদি আপনার মেজাজ খিটখিটে থাকে এবং তা দীর্ঘমেয়াদে চলতে থাকে।
  • যদি মেজাজের সঙ্গে শারীরিক সমস্যা, যেমন ঘন ঘন মাথাব্যথা, দুর্বলতা বা হতাশা দেখা দেয়।
  • যদি খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার পরও কোনও উন্নতি না হয়।

উপসংহার

মেজাজ খিটখিটে হওয়ার প্রধান কারণ হতে পারে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের অভাব। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন ডি, ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়ামের সঠিক মাত্রা বজায় রাখার মাধ্যমে মেজাজের উন্নতি করা সম্ভব। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে মেজাজ খিটখিটে হওয়া প্রতিরোধ করা যায়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top