ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির উপায়: শরীরের পানি ঘাটতি দূর করার কার্যকর সমাধান

ডিহাইড্রেশন (Dehydration) তখন ঘটে যখন শরীরে প্রয়োজনীয় পানি ও লবণসমূহের ঘাটতি হয়। এটি শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, রক্ত চলাচল, হজম এবং কোষীয় কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। ডিহাইড্রেশন যদি সময়মতো সমাধান করা না হয়, তবে তা গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তি পেতে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আসুন, জেনে নিই ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির কিছু কার্যকর উপায়।

ডিহাইড্রেশনের কারণসমূহ:

১. অতিরিক্ত ঘাম:
গরম আবহাওয়া বা শারীরিক পরিশ্রমের কারণে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে পানি হারিয়ে যায়।

raju akon youtube channel subscribtion

২. অত্যধিক মূত্রত্যাগ:
ডায়াবেটিস বা ডায়ুরেটিকসের (Diuretics) ব্যবহার শরীর থেকে অধিক পরিমাণে পানি নিঃসরণ করে, যা ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে।

৩. বমি ও ডায়রিয়া:
ডায়রিয়া ও বমির কারণে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও লবণ হারিয়ে যায়, যা ডিহাইড্রেশন ঘটায়।

৪. পর্যাপ্ত পানি না পান করা:
পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ার কারণে শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হয়, যা ডিহাইড্রেশন সৃষ্টি করে।

ডিহাইড্রেশনের লক্ষণসমূহ:

  • অতিরিক্ত তৃষ্ণা
  • শুকনো মুখ ও ত্বক
  • মাথা ঘোরা বা দুর্বল অনুভব করা
  • প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হলুদ হওয়া
  • কম প্রস্রাব হওয়া
  • ক্লান্তি ও অস্বস্তি

ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির উপায়:

১. পানি পান করা

ডিহাইড্রেশনের মূল প্রতিকার হলো প্রচুর পানি পান করা। দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করা উচিত। যদি ডিহাইড্রেশন খুব বেশি হয়, তাহলে ওআরএস (ORS) বা ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানি পান করা সবচেয়ে কার্যকর।

২. ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া

শরীরের লবণের ঘাটতি পূরণ করতে ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। ফলের রস, নারকেলের পানি, ও আর এস (ORS) ড্রিঙ্ক ইত্যাদি পানীয় শরীরে পানির পাশাপাশি লবণের ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে।

৩. গরমের সময় পানি গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করা

গরমের সময় শরীর থেকে বেশি পরিমাণে পানি হারায়। তাই এই সময় বেশি পানি পান করা উচিত। শারীরিক পরিশ্রম করলে বা গরম আবহাওয়ায় থাকলে নিয়মিত পানি পান করুন।

৪. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা

অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় শরীর থেকে পানি দ্রুত বের করে দেয়, যা ডিহাইড্রেশন ঘটাতে পারে। তাই ডিহাইড্রেশন থেকে মুক্তির জন্য এই ধরনের পানীয় এড়িয়ে চলা উচিত।

5. ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়া

তরমুজ, শশা, লেবু, কমলা ইত্যাদি ফল এবং শাকসবজিতে প্রচুর পানি রয়েছে। এগুলো নিয়মিত খেলে শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ হয়।

৬. ওআরএস (ORS) পান করা

যদি ডিহাইড্রেশন গুরুতর হয় তবে ওআরএস একটি আদর্শ সমাধান। এটি দ্রুত শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ করে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে।

৭. প্রচুর বিশ্রাম নেওয়া

ডিহাইড্রেশন হলে শরীরে দুর্বলতা আসতে পারে, তাই বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর বিশ্রাম নিয়ে শরীরকে পুনরুজ্জীবিত রাখুন।

ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ:

  • প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন।
  • গরমের সময় এবং ব্যায়ামের সময় বেশি পানি পান করুন।
  • ডায়রিয়া বা বমির সময় ওআরএস ব্যবহার করুন।
  • পানির ঘাটতি পূরণের জন্য ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ পানীয় পান করুন।
  • বেশি ঘাম হলে লবণ ও পানি সমৃদ্ধ খাবার খান।

উপসংহার:

ডিহাইড্রেশন দেহের জন্য মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তবে সচেতন হলে এর থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। পর্যাপ্ত পানি পান, ইলেক্ট্রোলাইট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া, এবং গরমের সময় সঠিকভাবে পানি গ্রহণের মাধ্যমে ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপনার শরীরের সঠিক যত্ন নিন এবং ডিহাইড্রেশন এড়িয়ে সুস্থ থাকুন।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top