ফলিক এসিড (ভিটামিন B9) গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান। এটি গর্ভাবস্থার শুরুতে শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং মায়ের সুস্থতার জন্য অত্যাবশ্যক। ফলিক এসিড শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের গঠন ঠিক রাখে এবং জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে। এই ব্লগে গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম ও এর উপকারিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ফলিক এসিড কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ফলিক এসিড মূলত শিশুর স্নায়ু নল (neural tube) বিকাশে সাহায্য করে। এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের সঠিক গঠন নিশ্চিত করে, যার ফলে শিশু নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (NTD) নামে পরিচিত সমস্যা থেকে মুক্ত থাকে। এর অভাবে গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডে জটিলতা দেখা দিতে পারে, যা মারাত্মক হতে পারে।
ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম:
১. গর্ভধারণের পূর্বেই ফলিক এসিড শুরু করুন:
চিকিৎসকরা সাধারণত গর্ভধারণের তিন মাস আগে থেকেই ফলিক এসিড গ্রহণ শুরু করার পরামর্শ দেন। এটি গর্ভধারণের শুরুতেই শিশুর সঠিক বিকাশে সহায়তা করে।
২. গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস:
গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে প্রতিদিন ৪০০ মাইক্রোগ্রাম (mcg) ফলিক এসিড সেবন করা উচিত। এই সময়ে শিশুর স্নায়ু নল তৈরি হয়, যা ফলিক এসিডের অভাবে সঠিকভাবে গঠিত নাও হতে পারে।
৩. গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসে:
গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসেও প্রতিদিন ৪০০-৬০০ মাইক্রোগ্রাম ফলিক এসিড সেবন করা জরুরি। এটি শিশুর সঠিক বৃদ্ধি এবং মায়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. ফলিক এসিডের প্রাকৃতিক উৎস:
ফলিক এসিড কেবলমাত্র সাপ্লিমেন্টের মাধ্যমে নয়, কিছু প্রাকৃতিক খাদ্য থেকেও পাওয়া যায়। কিছু ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার হলো:
- পালং শাক, কচু শাক, ব্রোকলি
- কমলা, কলা, পেঁপে
- মটরশুঁটি, বিনস
- ডিমের কুসুম, দুধ
ফলিক এসিডের উপকারিতা:
১. শিশুর সঠিক বিকাশ:
ফলিক এসিড শিশুর স্নায়ু নল গঠনে সহায়ক, যা শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের সঠিক বিকাশ নিশ্চিত করে। এটি গর্ভধারণের প্রথম তিন মাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. গর্ভপাতের ঝুঁকি কমায়:
নিয়মিত ফলিক এসিড সেবন করলে গর্ভপাতের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। এটি মায়ের শরীরকে গর্ভাবস্থায় সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
৩. প্রি-টার্ম ডেলিভারির ঝুঁকি কমায়:
সময়ের আগে শিশুর জন্ম (প্রি-টার্ম ডেলিভারি) থেকে রক্ষা পেতে ফলিক এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি মায়ের শরীরকে সুস্থ রাখে এবং শিশুর জন্মকালীন ঝুঁকি কমায়।
৪. রক্তশূন্যতা প্রতিরোধ:
গর্ভাবস্থায় অনেক নারী রক্তশূন্যতায় ভোগেন। ফলিক এসিড রক্তকোষ তৈরিতে সহায়ক, যা মায়ের রক্তশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ফলিক এসিডের ঘাটতি হলে কী হতে পারে?
ফলিক এসিডের অভাবে গর্ভের শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের গঠন সঠিকভাবে হয় না, যা নিউরাল টিউব ডিফেক্ট (NTD) নামে পরিচিত সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে শিশুর স্পাইনা বিফিডা, এনেনসেফালি ইত্যাদি গুরুতর জটিলতা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড সেবনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যদি আপনার পূর্বে কোনো গর্ভকালীন জটিলতা থেকে থাকে, তবে চিকিৎসক ফলিক এসিডের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিতে পারেন।
উপসংহার:
গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিডের সঠিক সেবন নিশ্চিত করলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য বজায় থাকে এবং শিশুর সঠিক বিকাশ ঘটে। তাই গর্ভধারণের আগে ও পর নিয়মিত ফলিক এসিড সেবন করতে ভুলবেন না। ফলিক এসিডের সঠিক পরিমাণ এবং সময়মতো সেবন আপনাকে এবং আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।