কোন ভিটামিনের অভাবে ঠান্ডা লাগে: শীতলতা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে করণীয়

ঠান্ডা লাগা বা ফ্লু সাধারণত ভাইরাসের কারণে হয়, তবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। সঠিক পুষ্টি ও ভিটামিনের অভাব হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, যা বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। এই ব্লগে কোন ভিটামিনের অভাবে ঠান্ডা লাগে এবং কীভাবে এর প্রতিকার করা যায়, তা বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

ঠান্ডা লাগার পেছনে ভিটামিনের অভাব:

১. ভিটামিন সি (Vitamin C) এর অভাব:
ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শ্বেত রক্ত কণিকার কার্যকারিতা উন্নত করে, যা ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থেকে শরীরকে রক্ষা করে। ভিটামিন সি এর অভাব হলে ঠান্ডা এবং ফ্লুর মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. ভিটামিন ডি (Vitamin D) এর অভাব:
ভিটামিন ডি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের আলো থেকে এই ভিটামিন পাওয়া যায়, তবে অনেক মানুষ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায় না, যা ভিটামিন ডি এর ঘাটতি তৈরি করে। ভিটামিন ডি এর অভাব হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় এবং ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেড়ে যায়।

৩. ভিটামিন এ (Vitamin A) এর অভাব:
ভিটামিন এ শ্বাসযন্ত্রের সুস্থতা রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মিউকাস মেমব্রেনকে সুস্থ রাখে, যা শ্বাসযন্ত্রকে জীবাণু ও ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। এর অভাবে শ্বাসযন্ত্র দুর্বল হয়ে যায় এবং ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৪. ভিটামিন ই (Vitamin E) এর অভাব:
ভিটামিন ই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ভিটামিন ই এর অভাব হলে শরীর সহজেই ঠান্ডা ও অন্যান্য সংক্রমণের শিকার হতে পারে।

ভিটামিনের অভাব পূরণের উপায়:

১. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার:
কমলালেবু, লেবু, আমলকি, পেঁপে, ব্রকলি, এবং কিউই খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

২. ভিটামিন ডি এর জন্য সূর্যের আলো:
প্রতিদিন কমপক্ষে ১৫-২০ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকা উচিত। বিশেষ করে সকালবেলার সূর্যের আলো থেকে শরীর পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পায়। এছাড়া ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার, যেমন ডিমের কুসুম, মাছের তেল, এবং দুধ গ্রহণ করা উচিত।

৩. ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার:
গাজর, কুমড়া, মিষ্টি আলু, শাকসবজি এবং ডিমের কুসুম ভিটামিন এ এর চমৎকার উৎস। নিয়মিত এসব খাবার খেলে শ্বাসযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং ঠান্ডার প্রকোপ কমে।

৪. ভিটামিন ই সমৃদ্ধ খাবার:
বাদাম, সূর্যমুখী বীজ, পালংশাক, এবং ব্রকলি ভিটামিন ই এর চমৎকার উৎস। এটি খেলে শরীরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কার্যকারিতা বাড়ে এবং ঠান্ডার ঝুঁকি কমে।

ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অন্যান্য করণীয়:

১. নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
শরীরকে সক্রিয় রাখলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত ব্যায়াম করলে শ্বেত রক্ত কণিকা দ্রুত কাজ করে এবং সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে।

২. পর্যাপ্ত পানি পান করুন:
শরীরকে হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করে।

৩. সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন:
প্রতিদিনের খাদ্যে পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিত করুন। ফল, শাকসবজি, প্রোটিন, এবং সম্পূর্ণ শস্য গ্রহণ করলে শরীর সুস্থ থাকে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমে।

উপসংহার:

ঠান্ডা লাগা সাধারণত ভাইরাসজনিত হলেও, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হলে ঠান্ডা লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে ভিটামিন সি, ডি, এ, এবং ই এর অভাব হলে ঠান্ডা লাগার প্রবণতা বেশি থাকে। সঠিক পুষ্টি এবং জীবনযাত্রা মেনে চললে ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।


📌 ঠিকানা:

পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।

📞 ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬।

✎ রাজু আকন, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top