সাপোজিটরি হলো একটি নির্দিষ্ট ধরনের ওষুধ যা রেকটাল (মলদ্বার) পদ্ধতিতে শরীরে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষ করে শিশুদের জ্বর কমানোর জন্য এটি প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। সাধারণত প্যারাসিটামল সাপোজিটরি শিশুদের শরীরের জ্বর দ্রুত কমাতে সহায়ক। তবে, কখনও কখনও সাপোজিটরি দেওয়ার পরেও জ্বর কমতে পারে না বা দীর্ঘস্থায়ী হয়। এই অবস্থায় কী করবেন, তা নিয়ে এই ব্লগে আলোচনা করা হয়েছে।
সাপোজিটরি দেওয়ার পর জ্বর না কমার কারণ
সাপোজিটরি দেওয়ার পর জ্বর না কমলে এর পেছনে কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
১. সংক্রমণ গুরুতর হওয়া
যদি শিশুর শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা কোনো গুরুতর সংক্রমণ থাকে, তবে শুধুমাত্র সাপোজিটরি দিয়ে জ্বর নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হতে পারে। এমন অবস্থায় অ্যান্টিবায়োটিক বা অন্যান্য বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে।
২. ওষুধ সঠিকভাবে কাজ না করা
কখনও কখনও সাপোজিটরি সঠিকভাবে কাজ না করলে জ্বর কমতে পারে না। ওষুধ সঠিকভাবে শোষিত না হলে, শরীর পর্যাপ্ত প্যারাসিটামল পায় না, যা জ্বর কমাতে সহায়ক।
৩. ওষুধের অল্প ডোজ
যদি সাপোজিটরির ডোজ শিশুর ওজন বা বয়স অনুযায়ী যথেষ্ট না হয়, তাহলে জ্বর কমতে পারে না। সঠিক ডোজ নিশ্চিত করা জরুরি।
৪. জ্বরের কারণ অন্য কিছু হতে পারে
কিছু ক্ষেত্রে জ্বরের কারণ সাধারণ সর্দি-কাশি বা ইনফেকশন ছাড়াও হতে পারে, যেমন ডিহাইড্রেশন, টীকাদানের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, দাঁত ওঠা, বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা। এসব ক্ষেত্রে সাপোজিটরি কার্যকর নাও হতে পারে।
সাপোজিটরি দেওয়ার পর জ্বর না কমলে করণীয়
যদি সাপোজিটরি দেওয়ার পর জ্বর না কমে বা জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:
১. জলপট্টি ব্যবহার করুন
শিশুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য কপালে এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ঠান্ডা জলপট্টি দিন। এতে তাপমাত্রা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
২. হালকা কাপড় পরান
শিশুর শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বের করতে হালকা এবং আরামদায়ক কাপড় পরান। ভারী কম্বল বা মোটা পোশাক এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে।
৩. শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখুন
জ্বর হলে শরীর থেকে অনেক পানি হারাতে পারে, তাই শিশুকে বেশি করে তরল খাবার দিন। বুকের দুধ, ফর্মুলা দুধ, বা পানি পান করান (যদি শিশু উপযুক্ত বয়সে পৌঁছে থাকে)।
৪. ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন
যদি সাপোজিটরি দেওয়ার পরেও জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শিশু খুবই দুর্বল ও অসুস্থ দেখায়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। বিশেষত, যদি জ্বর ৩৮.৫°C এর বেশি হয় এবং ২৪ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। ডাক্তার সংক্রমণ নির্ণয় করতে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নির্দেশ দিতে পারেন।
৫. অন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে
ডাক্তার প্রয়োজন হলে অ্যান্টিবায়োটিক, আইবুপ্রোফেন, বা অন্য কোনো ওষুধ দিতে পারেন যা জ্বর কমাতে এবং সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ কখনও নিজে থেকে দেবেন না।
কখন জরুরি সাহায্য প্রয়োজন?
জ্বরের সাথে খিঁচুনি দেখা দিলে।
শিশু যদি খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে দেয় বা অসুস্থভাবে ঘুমিয়ে থাকে।
শ্বাস নিতে কষ্ট হলে।
শিশুর শরীর খুবই দুর্বল বা ঝিমিয়ে থাকলে।
উপসংহার
সাপোজিটরি দেওয়ার পর যদি জ্বর না কমে, তবে এটি একটি গুরুতর পরিস্থিতির লক্ষণ হতে পারে। এমন অবস্থায় জলপট্টি, হালকা কাপড়, এবং প্রচুর তরল দেওয়া সহ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। সঠিক চিকিৎসা এবং যত্নের মাধ্যমে শিশুর জ্বর দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।