নবজাতকের ঠান্ডা লাগা খুবই সাধারণ সমস্যা, কারণ তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণভাবে বিকশিত হয় না। ঠান্ডা বা সর্দি-কাশি হলে নবজাতকরা বেশ অস্বস্তি বোধ করে এবং যদি সময়মতো সঠিক যত্ন না নেওয়া হয়, তবে এটি আরও গুরুতর সমস্যার কারণ হতে পারে। তবে নবজাতকের ঠান্ডা লাগার লক্ষণগুলো চিনে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব।
এই ব্লগে আমরা নবজাতকের ঠান্ডা লাগার প্রধান লক্ষণ এবং সেগুলো দেখলে কী করবেন, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
নবজাতকের ঠান্ডা লাগার সাধারণ লক্ষণ
১. নাক দিয়ে পানি বা সর্দি ঝরা
নবজাতকের ঠান্ডা লাগার একটি সাধারণ লক্ষণ হলো নাক দিয়ে সর্দি বা পানি ঝরা। প্রথমে সর্দি পাতলা হতে পারে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এটি ঘন এবং হলুদ বা সবুজ রঙের হতে পারে। এটি শিশুর শ্বাস নেওয়াকে কষ্টসাধ্য করতে পারে।
২. হাঁচি দেওয়া
নবজাতক যদি বারবার হাঁচি দিতে থাকে, তবে এটি ঠান্ডা লাগার ইঙ্গিত হতে পারে। হাঁচি দিয়ে নবজাতকের শরীর ঠান্ডা বা ধুলা-ময়লা দূর করতে চেষ্টা করে।
৩. শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
ঠান্ডা লাগলে নবজাতকের নাক বন্ধ হয়ে যায়, যা তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট দেয়। আপনি লক্ষ করতে পারেন যে, তারা দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে বা শ্বাস নিতে অস্বস্তি বোধ করছে।
৪. কাশি
নবজাতকের ঠান্ডা লাগার ফলে তাদের মধ্যে কাশি দেখা দিতে পারে। ঠান্ডার কারণে গলা শুকিয়ে যাওয়া বা গলায় ইনফেকশন হওয়ার ফলে তারা কাশি দিতে পারে।
৫. জ্বর
ঠান্ডা লাগার কারণে নবজাতকের শরীরে জ্বর হতে পারে। জ্বর হলো শরীরের প্রতিরোধ প্রতিক্রিয়া, যা ইনফেকশনের বিরুদ্ধে কাজ করে।
৬. খাওয়াতে অস্বস্তি বা খাওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়া
ঠান্ডার কারণে নবজাতকরা স্তন্যপান বা বোতল থেকে দুধ খাওয়ার সময় অস্বস্তি বোধ করতে পারে। নাক বন্ধ থাকলে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলে, তারা ঠিকমতো খেতে পারে না, যার ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়।
৭. শারীরিক দুর্বলতা বা অস্বাভাবিক ঘুমানো
ঠান্ডা লাগলে নবজাতকরা অনেক বেশি ক্লান্ত বা দুর্বল হতে পারে। আপনি লক্ষ্য করতে পারেন যে তারা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ঘুমাচ্ছে বা খুব বেশি অস্বস্তি বোধ করছে।
৮. চোখ দিয়ে পানি ঝরা বা লালচে হওয়া
ঠান্ডা লাগলে অনেক সময় নবজাতকের চোখ দিয়ে পানি ঝরে বা চোখ লালচে হয়ে যেতে পারে। এটি সংক্রমণের লক্ষণও হতে পারে।
নবজাতকের ঠান্ডা লাগলে করণীয়
নবজাতকের ঠান্ডা লাগার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সহজ পদক্ষেপে ঠান্ডা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব:
১. শিশুকে উষ্ণ রাখুন
শিশুর শরীর উষ্ণ রাখতে চেষ্টা করুন। নরম এবং আরামদায়ক কাপড় পরান এবং নিশ্চিত করুন যে তারা যথেষ্ট উষ্ণ অবস্থায় আছে।
২. নাক পরিষ্কার রাখুন
নবজাতকের নাক পরিষ্কার রাখতে নরম কাপড় বা ন্যাজাল এসপিরেটর ব্যবহার করতে পারেন। এর ফলে তারা শ্বাস নিতে সহজ অনুভব করবে।
৩. ভ্যাপারাইজার ব্যবহার করুন
শিশুর ঘরে হিউমিডিফায়ার বা ভ্যাপারাইজার ব্যবহার করলে শুষ্ক বাতাস দূর হবে এবং শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে।
৪. প্রচুর তরল খাওয়ান
নবজাতক যদি বুকের দুধ খায়, তাহলে ঘন ঘন খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। বুকের দুধে প্রচুর পরিমাণে এন্টিবডি থাকে, যা শিশুকে রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৫. ডাক্তারের পরামর্শ নিন
যদি শিশুর জ্বর দীর্ঘস্থায়ী হয় বা কাশি এবং শ্বাসকষ্টের লক্ষণ বাড়ে, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নবজাতকদের শরীর অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই দেরি না করে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া জরুরি।
উপসংহার
নবজাতকের ঠান্ডা লাগার লক্ষণগুলো সহজেই চেনা যায়, যেমন নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, হাঁচি, শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং খাওয়াতে অস্বস্তি। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যাতে ঠান্ডা গুরুতর হয়ে না ওঠে। প্রয়োজন হলে ডাক্তারকে দেখিয়ে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা উচিত, কারণ নবজাতকের শরীর খুবই সংবেদনশীল এবং তাদের দ্রুত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।