গলায় কিছু আটকে থাকা মনে হওয়া: কারণ, লক্ষণ এবং করণীয়

অনেক সময় আমাদের মনে হয়, গলায় কিছু আটকে আছে বা কোনো বস্তু আটকে রয়েছে। এই অনুভূতিটি বেশ অস্বস্তিকর এবং শ্বাস নিতে কষ্টের মতো অনুভূতি তৈরি করতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থাকে গ্লোবাস সেনসেশন (Globus Sensation) বলা হয়। যদিও বাস্তবে কিছু আটকে না থাকলেও মনে হয় গলা আটকে গেছে। চলুন আজকের এই ব্লগে গলা আটকে থাকার অনুভূতির কারণ, এর লক্ষণ এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত জানি।

গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতির কারণ:

গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা GERD: গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD) হলে পাকস্থলীর এসিড গলায় উঠে আসে, যা গলায় জ্বালাপোড়া এবং আটকে থাকার অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে।
  2. অতিরিক্ত উদ্বেগ ও মানসিক চাপ: মনোদৈহিক সমস্যার কারণে গলায় কোনো বস্তু আটকে থাকার মতো অনুভূতি হয়। মানসিক চাপ বা উদ্বেগের সময় আমাদের পেশি কঠিন হয়ে যায়, যার ফলে এই সমস্যাটি বেশি হয়।
  3. গলার শুষ্কতা বা ইনফেকশন: দীর্ঘমেয়াদী শুষ্কতা, ঠান্ডা লাগা বা গলার ইনফেকশনের কারণে গলায় আটকে থাকার অনুভূতি হতে পারে।
  4. গলায় ক্ষত বা ইনফ্লেমেশন: গলার টিস্যুতে কোনো আঘাত বা সংক্রমণ হলে সেখানে ফুলে যেতে পারে এবং গলায় আটকে থাকার অনুভূতি সৃষ্টি হতে পারে।
  5. থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থির বৃদ্ধির কারণে (গলগণ্ড বা গয়টার) গলায় কিছু আটকে আছে এমন অনুভূতি হতে পারে।
  6. এলার্জি: কিছু খাবার বা ধুলাবালির প্রতি এলার্জির কারণে গলায় অস্বস্তি এবং আটকে থাকার অনুভূতি হয়।
  7. পোস্ট ন্যাসাল ড্রিপ: যখন সাইনাস থেকে সর্দি গলার পেছনে প্রবাহিত হয়, তখন এটি গলায় আটকে থাকার অনুভূতি তৈরি করতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

গলায় আটকে থাকার অনুভূতির লক্ষণ:

গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতির সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকতে পারে। যেমন:

  • গলার ভেতরে চাপ অনুভব করা।
  • শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া।
  • গলায় খুসখুসে অনুভূতি।
  • খাবার খেতে বা গিলতে কষ্ট হওয়া।
  • মাঝে মাঝে বমি বা বমি বমি ভাব।

গলায় আটকে থাকার প্রতিকার:

গ্লোবাস সেনসেশন প্রায়ই গুরুতর কোনো সমস্যার কারণে হয় না, তবে এটি অস্বস্তিকর হতে পারে। সমস্যার প্রকৃত কারণ জানলে এর প্রতিকার করা সহজ হয়। কিছু সম্ভাব্য প্রতিকার হলো:

  1. গরম পানির ভাপ নেয়া: গলা পরিষ্কার রাখতে এবং শ্বাসনালী উন্মুক্ত করতে গরম পানির ভাপ নেয়া যেতে পারে। এটি গলার শুষ্কতা বা ইনফেকশনের জন্য উপকারী।
  2. অ্যাসিড রিফ্লাক্স নিয়ন্ত্রণ: যদি অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি হয়, তবে কম মশলাযুক্ত খাবার খাওয়া, ধূমপান এবং অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা, এবং ওষুধ সেবন করতে হবে।
  3. মানসিক চাপ কমানো: মানসিক চাপ ও উদ্বেগ গলা আটকে থাকার অন্যতম কারণ। মেডিটেশন, যোগব্যায়াম এবং শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো সম্ভব।
  4. অ্যান্টি-এলার্জি ওষুধ সেবন: যদি এলার্জি থেকে গলায় অস্বস্তি হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে অ্যান্টি-এলার্জি ওষুধ সেবন করা যেতে পারে।
  5. গলা পরিষ্কার রাখা: নিয়মিত লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা গলার শুষ্কতা ও সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
  6. থাইরয়েডের চিকিৎসা: যদি থাইরয়েডের বৃদ্ধির কারণে গলায় আটকে থাকার অনুভূতি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী থাইরয়েডের চিকিৎসা করতে হবে।

চিকিৎসকের পরামর্শ:

যদি গলায় আটকে থাকার অনুভূতি দীর্ঘমেয়াদী হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসক সমস্যার মূল কারণ নির্ধারণ করতে বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারেন যেমন এন্ডোস্কপি, থাইরয়েড টেস্ট, বা সাইনাসের পরীক্ষা।

উপসংহার:

গলায় কিছু আটকে থাকার অনুভূতি অস্বস্তিকর হলেও সাধারণত এটি কোনো গুরুতর সমস্যা নয়। তবে যদি এই অনুভূতি দীর্ঘদিন ধরে থাকে বা এর সাথে শ্বাসকষ্ট, তীব্র ব্যথা, বা খাবার গিলতে সমস্যা হয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসা করানো উচিত। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে আপনি সহজেই এই সমস্যা এড়াতে পারবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top