লোহিত রক্তকণিকা বেড়ে গেলে কী হয়: বিস্তারিত ও সমাধান

শরীরের প্রতিটি অঙ্গ ও কোষকে সঠিকভাবে কার্যকর করার জন্য রক্তকণিকার সঠিক মাত্রা থাকা গুরুত্বপূর্ণ। রক্তের মূল উপাদানের একটি হলো লোহিত রক্তকণিকা বা রেড ব্লাড সেল (RBC)। তবে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বেড়ে গেলে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। আজকের এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানবো, লোহিত রক্তকণিকা বেড়ে গেলে কী হয়, এর কারণসমূহ, উপসর্গ, এবং প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

লোহিত রক্তকণিকা কী?

লোহিত রক্তকণিকা হলো রক্তের একটি প্রধান উপাদান, যা অক্সিজেন পরিবহণের কাজ করে। হিমোগ্লোবিন নামক প্রোটিন লোহিত রক্তকণিকায় থাকে, যা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করে শরীরের বিভিন্ন কোষে পৌঁছে দেয়। এভাবে কোষগুলো তাদের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে পারে এবং শরীরে বিভিন্ন বর্জ্যপদার্থ যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড বাহিরে ফেলার জন্যও দায়ী।

raju akon youtube channel subscribtion

লোহিত রক্তকণিকা বেড়ে গেলে কী ঘটে?

লোহিত রক্তকণিকা বা RBC এর স্বাভাবিক মাত্রা হলে শরীরের সবকিছু স্বাভাবিকভাবে কাজ করে। তবে যদি লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বেশি হয়ে যায়, একে “পলিসাইথেমিয়া” (Polycythemia) বলা হয়। পলিসাইথেমিয়া হলে শরীরের রক্ত ঘন হয়ে যায়, ফলে রক্ত প্রবাহে সমস্যা হয় এবং হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

পলিসাইথেমিয়ার কারণসমূহ:

লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:

  1. দীর্ঘমেয়াদী অক্সিজেনের অভাব: উচ্চ পর্বতে বসবাস, বা দীর্ঘ সময় অক্সিজেনের স্বল্পতা পাওয়া হলে লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন বাড়তে পারে।
  2. প্রাথমিক পলিসাইথেমিয়া: এটি একটি রোগ যেখানে রক্ত তৈরির জন্য দায়ী অস্থিমজ্জা অতিরিক্ত পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন করে।
  3. ফুসফুসের সমস্যা: দীর্ঘমেয়াদী ফুসফুসের সমস্যা বা COPD-এর কারণে শরীর অক্সিজেনের স্বল্পতা পায়, ফলে লোহিত রক্তকণিকা বেড়ে যায়।
  4. হৃদরোগ: দীর্ঘ সময়ের জন্য হার্টের কার্যকারিতা কমে গেলে লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে।

পলিসাইথেমিয়ার লক্ষণসমূহ:

লোহিত রক্তকণিকা বেড়ে গেলে শরীরে যে লক্ষণগুলো দেখা দেয় তা হলো:

  1. মাথাব্যথা: পলিসাইথেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়ই তীব্র মাথাব্যথার শিকার হন।
  2. দুর্বলতা ও ক্লান্তি: শরীরে অতিরিক্ত রক্ত থাকায় অক্সিজেন প্রবাহে অসুবিধা হয়, যার ফলে দ্রুত ক্লান্তি অনুভব হয়।
  3. ত্বকের লালচে রঙ: রক্তের ঘনত্ব বেড়ে যাওয়ায় ত্বকের রঙ লালচে হতে পারে, বিশেষত মুখমণ্ডল ও হাত-পায়ের অংশে।
  4. শ্বাসকষ্ট: শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছতে না পারার কারণে শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
  5. রক্তক্ষরণ ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া: রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্তক্ষরণ বা নাক দিয়ে রক্ত পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
  6. স্নায়বিক সমস্যা: ঘন রক্তের কারণে স্নায়বিক প্রক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

পলিসাইথেমিয়ার প্রতিকার ও চিকিৎসা:

পলিসাইথেমিয়ার চিকিৎসা মূলত এর কারণের ওপর নির্ভর করে। চিকিৎসার প্রধান লক্ষ হলো রক্তের ঘনত্ব কমানো এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিছু সম্ভাব্য চিকিৎসা পদ্ধতি নিচে উল্লেখ করা হলো:

  1. রক্তদান: রক্তদান পদ্ধতির মাধ্যমে শরীর থেকে কিছু রক্ত অপসারণ করা হয়, যাতে রক্তের ঘনত্ব কমানো যায়।
  2. ওষুধ সেবন: কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যেমন অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্টস বা রক্ত তরল করার ওষুধ ব্যবহার করা হয়, যাতে রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করা যায়।
  3. অক্সিজেন থেরাপি: যেসব রোগী ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের অক্সিজেন থেরাপি দেয়া হয় যাতে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে।
  4. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: পলিসাইথেমিয়ার ঝুঁকি কমানোর জন্য ধূমপান বন্ধ করা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত পানি পান করা উচিত।

পলিসাইথেমিয়া প্রতিরোধে করণীয়:

লোহিত রক্তকণিকার মাত্রা বেড়ে যাওয়া প্রতিরোধে কিছু করণীয় রয়েছে, যেমন:

  • উচ্চ পর্বতে দীর্ঘমেয়াদী সময় অতিবাহিত না করা।
  • ধূমপান ও অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা।
  • পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং হালকা ব্যায়াম করা।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো, বিশেষত যদি আপনি ফুসফুস বা হৃদরোগে আক্রান্ত হন।

উপসংহার:

লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বেড়ে গেলে শরীরে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, যা সময়মতো সনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। তাই, যদি পলিসাইথেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। এছাড়া জীবনযাত্রায় স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন এনে এবং নিয়মিত পরীক্ষা করিয়ে এই সমস্যাকে সহজেই প্রতিরোধ করা সম্ভব।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top