শিশুর প্রথম বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময়ের মধ্যে তার শারীরিক, মানসিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটে। ১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য দুধ একটি অপরিহার্য পুষ্টির উৎস, কিন্তু বাহিরের দুধ যেমন গরুর দুধ বা ছাগলের দুধ খাওয়ানোর আগে কিছু বিষয় জানা অত্যন্ত জরুরি।
বাহিরের দুধ খাওয়ানোর ঝুঁকিসমূহ:
১. অপর্যাপ্ত পুষ্টি:
বাহিরের দুধের পুষ্টির গুণাগুণ সাধারণত মায়ের দুধের তুলনায় কম। গরুর দুধে পর্যাপ্ত আয়রন, ভিটামিন ই এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান নেই যা শিশুর বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এর ফলে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণের অভাব দেখা দিতে পারে।
২. এলার্জি ও অরক্ষিততা:
১ বছরের নিচের শিশুদের গরুর দুধে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য উপাদানগুলো এলার্জির কারণ হতে পারে। অনেক সময় শিশুদের হজম শক্তি এই ধরনের দুধের সাথে মানিয়ে নিতে পারে না, ফলে পেটের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
৩. হজমের সমস্যা:
বাহিরের দুধের কিছু উপাদান শিশুর পাচনতন্ত্রের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। গরুর দুধের প্রোটিন এবং মিনারেল শিশুর কিডনির জন্যও চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যা তাদের হজম ক্ষমতার উন্নতির জন্য উপকারী নয়।
৪. অসুস্থতা ও সংক্রমণের ঝুঁকি:
গরুর দুধের উচ্চ প্রোটিন এবং সোডিয়াম পরিমাণ শিশুর কিডনিতে চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যার ফলে কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া, বাহিরের দুধ সংক্রামক রোগেরও ঝুঁকি বহন করে যদি এটি সঠিকভাবে সঞ্চালিত না হয়।
৫. শিশুর বিকাশে ব্যাঘাত:
বাহিরের দুধ খাওয়ানোর ফলে শিশুর উচ্চারণ এবং মস্তিষ্কের বিকাশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। মায়ের দুধের তুলনায় বাহিরের দুধের হজম ক্ষমতা কম থাকায় শিশুর খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং বিকাশে অসুবিধা হতে পারে।
মায়ের দুধের উপকারিতা:
১. সঠিক পুষ্টির উৎস: মায়ের দুধে রয়েছে সমস্ত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন, এবং মিনারেল যা শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য অপরিহার্য।
২. রোগ প্রতিরোধ: মায়ের দুধ শিশুকে নানা ধরনের সংক্রমণ এবং রোগ থেকে রক্ষা করে। এতে থাকা অ্যান্টিবডি শিশুর ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।
৩. হজমে সহায়তা: মায়ের দুধ সহজে হজম হয় এবং এটি শিশুর পাচনতন্ত্রের জন্য উপকারী।
৪. আবেগগত বন্ধন: মায়ের দুধ খাওয়ানোর সময় শিশুর সাথে মায়ের আবেগগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
উপসংহার:
এক বছরের নিচে শিশুদের বাহিরের দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। মায়ের দুধ বা ফর্মুলা দুধ শিশুদের সঠিক পুষ্টি এবং বিকাশের জন্য আদর্শ। সন্তানের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। তাই, ১ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে বাহিরের দুধ না খাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।