শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি

শিশুদের সঠিক পুষ্টি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ানো প্রতিটি অভিভাবকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানো অনেক সময় স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং ইউনিসেফ শিশুকে প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়। তবে, নানা কারণে শিশুকে ফিডারে বা বোতলে খাওয়ানো হয়, যা কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

এই ব্লগে আমরা শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো এবং কীভাবে এই ঝুঁকিগুলো এড়ানো যায় তা নিয়ে আলোচনা করবো।

শিশুকে বোতল বা ফিডারে খাওয়ানোর স্বাস্থ্যঝুঁকি:

১. ফিডার থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি:

ফিডার বা বোতল পরিষ্কার না থাকলে বা জীবাণুমুক্ত না করলে শিশুর সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ময়লা ফিডারে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস জন্মাতে পারে, যা শিশুর হজম সমস্যা, ডায়রিয়া, এবং অন্যান্য সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

raju akon youtube channel subscribtion

২. কানের সংক্রমণ:

ফিডার দিয়ে শিশুকে শোয়ানো অবস্থায় খাওয়ালে তার কানে দুধ ঢুকে যেতে পারে, যা কানের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ধরনের সংক্রমণ শিশুর কানের ব্যথা বা দীর্ঘমেয়াদে শ্রবণশক্তি হ্রাসের কারণ হতে পারে।

৩. অতিরিক্ত গ্যাস বা বায়ু জমার সমস্যা:

ফিডার বা বোতল দিয়ে খাওয়ানোর সময় শিশুর শরীরে বাতাস প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে, যা শিশুর পেটে গ্যাস জমার কারণ হতে পারে। এটি পেটব্যথা বা কোলিকের কারণ হতে পারে।

৪. বুকের দুধ গ্রহণে অক্ষমতা:

শিশুকে ফিডারের মাধ্যমে খাওয়ানোর ফলে সে মায়ের বুকের দুধ খেতে অস্বস্তি বোধ করতে পারে বা বুকের দুধ ঠিকমতো খেতে পারে না। এতে শিশুর প্রাকৃতিক পুষ্টি পাওয়ার সুযোগ কমে যেতে পারে, কারণ বুকের দুধ হলো শিশুর জন্য সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার।

৫. দাঁতের সমস্যা:

ফিডার বা বোতল দিয়ে শিশুকে চিনি মিশ্রিত দুধ বা অন্যান্য মিষ্টি পানীয় খাওয়ালে শিশুর দাঁতের ক্ষয় বা ক্যাভিটি হতে পারে। দাঁতের সমস্যা শিশুদের ভবিষ্যতে আরও জটিল দাঁতের সমস্যার দিকে নিয়ে যেতে পারে।

৬. ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি:

ফিডার দিয়ে খাওয়ানোর সময় শিশুর অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা থাকে, কারণ বোতল থেকে দুধ দ্রুত প্রবাহিত হয়। অতিরিক্ত দুধ বা খাবার খাওয়ার কারণে শিশুর ওজন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে পারে, যা তার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

৭. অ্যালার্জির ঝুঁকি:

ফিডারে ব্যবহৃত দুধ বা অন্যান্য খাবারে শিশুর অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গরুর দুধ, ফর্মুলা দুধ বা ফিডারে দেওয়া অন্য কোনো উপাদান শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

ফিডার ব্যবহার এড়িয়ে করণীয়:

১. মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো:

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন যে প্রথম ছয় মাস শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। বুকের দুধ শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে।

২. সঠিকভাবে ফিডার জীবাণুমুক্ত করা:

যদি ফিডার বা বোতল ব্যবহার করতেই হয়, তবে তা অবশ্যই ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে। প্রতিবার খাওয়ানোর আগে এবং পরে বোতল এবং ফিডার সম্পূর্ণ পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

৩. শিশুকে বসিয়ে খাওয়ানো:

শিশুকে শোয়ানো অবস্থায় খাওয়ানো এড়িয়ে চলা উচিত। শিশুকে বসিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন, এতে কানে দুধ ঢোকার ঝুঁকি কমে যাবে।

৪. অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলা:

ফিডারে শিশুকে মিষ্টি পানীয়, যেমন—চিনি মিশ্রিত দুধ বা জুস খাওয়ানো এড়িয়ে চলা উচিত। এতে দাঁতের ক্ষয়ের ঝুঁকি কমবে।

৫. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন:

শিশুর পুষ্টি এবং খাওয়ানোর পদ্ধতি নিয়ে কোনো দ্বিধা থাকলে শিশুর চিকিৎসক বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তারা আপনার শিশুর জন্য সঠিক খাওয়ানোর পদ্ধতি সম্পর্কে নির্দেশনা দিতে পারবেন।

শিশুকে ফিডারে খাওয়ানোর ফলে বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে, যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য সবচেয়ে সুরক্ষিত এবং পুষ্টিকর খাবার। তবে যদি ফিডার ব্যবহার করতেই হয়, তবে তা সঠিকভাবে পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত করে শিশুকে খাওয়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য যত্ন এবং সচেতনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top