করোনাভাইরাস (COVID-19) এখনো আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। সাধারণ মানুষ যেমন এ ভাইরাসের ঝুঁকিতে থাকে, তেমনি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্যও এটি একটি বিশেষভাবে উদ্বেগজনক বিষয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হলে মাতৃ ও সন্তানের উভয়ের স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া জরুরি। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করবো অন্তঃসত্ত্বা নারীদের করোনা হলে কী করণীয় এবং কীভাবে নিজেকে ও গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখা যায়।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের করোনা ঝুঁকি:
গর্ভাবস্থায় নারীদের শরীরে অনেক পরিবর্তন ঘটে, যার ফলে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে তারা অন্যান্য সংক্রমণের মতো করোনা ভাইরাসেরও ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তবে গবেষণা অনুযায়ী, অন্তঃসত্ত্বা নারীরা করোনা ভাইরাসে সাধারণ মানুষের মতোই আক্রান্ত হতে পারেন, তবে কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীর করোনা হলে করণীয়:
১. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
করোনা উপসর্গ যেমন জ্বর, শুষ্ক কাশি, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা বা স্বাদ-গন্ধ হারানোর লক্ষণ দেখা দিলে, তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক আপনার শারীরিক অবস্থা মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
২. নিজেকে আইসোলেট করুন:
যদি আপনার করোনার উপসর্গ থাকে, তাহলে নিজেকে আলাদা করুন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে দূরে থাকুন। একটি নির্দিষ্ট ঘরে থাকুন এবং সম্ভব হলে আলাদা বাথরুম ব্যবহার করুন। ঘরের অভ্যন্তরে সারাক্ষণ মাস্ক ব্যবহার করুন।
৩. পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন:
গর্ভাবস্থায় শরীর এমনিতেই ক্লান্ত থাকে, তাই করোনা আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্রাম শরীরকে সেরে উঠতে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. পানি ও তরল বেশি পান করুন:
করোনার সময় শরীর হাইড্রেটেড রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পানি, ফ্লুইড, গরম চা, স্যুপ, এবং ফলের রস পান করুন। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে আর্দ্র রাখে।
৫. সুস্থ এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন:
গর্ভাবস্থায় এবং করোনা আক্রান্ত অবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যেমন—সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার শরীরকে শক্তিশালী রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া, ভিটামিন সি ও ডি সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীর দ্রুত সেরে ওঠে।
৬. জ্বর ও ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করুন:
যদি জ্বর বা শরীর ব্যথা হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল সেবন করুন। তবে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া গ্রহণ করবেন না।
৭. শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত চিকিৎসা নিন:
যদি শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে সমস্যা হয়, তাহলে দেরি না করে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করুন। শ্বাসকষ্ট গর্ভবতী নারীদের জন্য একটি গুরুতর লক্ষণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় করোনার প্রতিরোধে করণীয়:
১. ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন:
গবেষণায় দেখা গেছে, করোনার টিকা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য নিরাপদ। ভ্যাকসিন গ্রহণ করলে মা এবং তার গর্ভস্থ শিশুর সুরক্ষা বৃদ্ধি পায়। যদি আপনি এখনো টিকা না নিয়ে থাকেন, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত টিকা গ্রহণ করুন।
২. স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন:
- নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
- বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার করুন।
- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।
- ঘরে ফিরে জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ও ব্যবহৃত সামগ্রী পরিষ্কার করুন।
৩. মানসিক চাপ কমান:
করোনা সংক্রমণের ভয় এবং গর্ভাবস্থার শারীরিক চাপ মিলিয়ে অনেক সময় মানসিক চাপ বাড়তে পারে। মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সময় কাটিয়ে মানসিকভাবে ভালো থাকার চেষ্টা করুন।
৪. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা:
গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনীয় আল্ট্রাসাউন্ড ও অন্যান্য পরীক্ষাগুলো করিয়ে নিন। করোনার সময় টেলিমেডিসিনের মাধ্যমেও চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
গর্ভাবস্থায় করোনা আক্রান্ত হলে চিন্তার কিছু নেই, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া অত্যন্ত জরুরি। নিজের শরীরের যত্ন নিন, যথেষ্ট বিশ্রাম নিন, এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা যেমন ভ্যাকসিন গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আপনাকে এবং আপনার গর্ভস্থ শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে সহায়ক হবে। এছাড়া, মানসিকভাবে ইতিবাচক থাকা এবং স্ট্রেস কমানোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।