সস্তায়ই হোক সুষম খাবারের যোগাড়

সুষম খাবার বলতে আমরা এমন একটি খাদ্যতালিকা বুঝি যেখানে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান সঠিক অনুপাতে থাকে। এটি আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু বর্তমান সময়ে খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকেই মনে করেন, সুষম খাবার খাওয়া মানেই ব্যয়বহুল খাবারের দিকে ঝুঁকতে হবে। বাস্তবে, সীমিত বাজেটেও সহজে সুষম খাবারের যোগাড় করা সম্ভব। আজকের ব্লগে আলোচনা করবো, কীভাবে সস্তায়ও সুষম খাবার পাওয়া সম্ভব।

সুষম খাবার কি?

সুষম খাবারে বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান যেমন— কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, মিনারেলস এবং ফাইবার থাকতে হয়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এই উপাদানগুলো সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সাধারণত ভাত, রুটি, মাছ, মাংস, ডাল, সবজি, ফল এবং দুধজাত খাবার সুষম খাবারের মূল উৎস।

raju akon youtube channel subscribtion

সস্তায় সুষম খাবারের যোগাড়ের উপায়:

১. স্থানীয় মৌসুমি সবজি ও ফল খাওয়া:

মৌসুমি সবজি ও ফল সস্তা এবং সহজলভ্য। যেমন—শীতকালে শাকসবজি বেশি পাওয়া যায়, আবার গ্রীষ্মকালে কাঁচা আম, জাম, তরমুজ, বেগুন ইত্যাদি ফল ও সবজি সহজলভ্য হয়। মৌসুমি খাবার কম দামে পাওয়া যায় এবং তাতে পুষ্টিগুণও বেশি থাকে। তাই প্রতি মৌসুমে সেই সময়কার সবজি ও ফল খাদ্যতালিকায় রাখুন।

২. ডাল ও শস্যের ব্যবহার:

ডাল হলো প্রোটিনের একটি অন্যতম সস্তা উৎস। বিভিন্ন ধরনের ডাল যেমন— মসুর ডাল, মুগ ডাল, চানা ডাল সহজলভ্য এবং দামেও কম। এছাড়াও ভাত বা রুটির সঙ্গে লবণ ও কাঁচা পেঁয়াজ মিশিয়ে খেলে সহজে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ করা যায়। শস্য যেমন— গম, চাল, ওটস, এবং ভুট্টা শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ করতে পারে, যা সহজে সস্তায় পাওয়া যায়।

৩. ডিম খাওয়া:

ডিম হলো একটি সম্পূর্ণ প্রোটিনের উৎস। এটি খুব সস্তা এবং প্রোটিন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি, আয়রন এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে। প্রতিদিন ১-২টি ডিম খেলে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই পূরণ করা সম্ভব। ডিম সেদ্ধ, ভাজা, বা কারি হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

4. মাছের বিকল্প হিসাবে ছোট মাছ ও ডাল:

বড় মাছের দাম বেশি হওয়ায় অনেকে মাছ খাওয়া এড়িয়ে যান। কিন্তু ছোট মাছ যেমন—মলা, ঢেলা, পুঁটি ইত্যাদি সস্তায় পাওয়া যায় এবং এগুলোতে প্রচুর পুষ্টি থাকে। এছাড়াও, মাছের পরিবর্তে ডাল, বাদাম বা সস্তা প্রোটিনযুক্ত খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় যোগ করতে পারেন।

৫. মাংসের বিকল্প খুঁজুন:

মাংসের দাম বেশি হওয়ায় প্রোটিনের জন্য বিকল্প খুঁজুন। যেমন—ডিম, ডাল, মটরশুঁটি, ছোলা, চিঁড়া, দুধ ও দুধজাত খাবার। এগুলো সস্তা এবং সহজে পাওয়া যায়। এছাড়াও, সপ্তাহে ১-২ দিন মাংস বাদ দিয়ে ডাল-সবজি বা ছোট মাছ খেতে পারেন।

৬. স্বল্পমূল্যের দুধজাত খাবার:

দুধ এবং দুধজাত খাবার যেমন— দই, ছানা, পনির অত্যন্ত পুষ্টিকর। কম দামের প্যাকেটজাত দুধ বা স্থানীয় বাজারের কাঁচা দুধ কিনে খেলে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ঘরে বসেই দই বানানো সম্ভব, যা সস্তায় পুষ্টি পাওয়ার ভালো উপায়।

৭. নিজের বাড়িতে শাকসবজি চাষ:

যাদের বাড়িতে একটু জায়গা আছে, তারা সহজেই বাড়িতে শাকসবজি চাষ করতে পারেন। বারান্দায় বা ছাদে ছোট টবে শাকসবজি যেমন— পালং শাক, ধনিয়া পাতা, পুদিনা পাতা, লাল শাক ইত্যাদি চাষ করতে পারেন। এতে কম খরচে ঘরে স্বাস্থ্যকর সবজি পাওয়া সম্ভব।

৮. পরিকল্পিত বাজার করা:

বাজার করার সময় একবারে বড় পরিমাণে কেনাকাটা করা অর্থ সাশ্রয়ের ভালো উপায়। বেশি পরিমাণে কিনলে অনেক সময় দাম কমে যায়। এছাড়াও, সপ্তাহের শুরুতেই বাজারের একটি তালিকা তৈরি করে নিন যাতে প্রয়োজনীয় খাবার কেনা হয় এবং অপচয় কম হয়।

৯. প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়িয়ে চলুন:

প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন— ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত খাবার ইত্যাদি সস্তা মনে হলেও দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর বদলে ঘরে তৈরি খাবার খেলে তা হবে পুষ্টিকর এবং ব্যয়বহুলও হবে না।

সুষম খাবার মানেই যে বেশি খরচ হবে, তা নয়। সীমিত বাজেটেও সহজে সুষম খাবারের যোগাড় করা সম্ভব, যদি আমরা সচেতনভাবে পুষ্টিকর খাবার বেছে নিই এবং বাজেট অনুযায়ী কেনাকাটা করি। সুষম খাবার শরীরকে সুস্থ রাখে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং জীবনের গুণগত মান উন্নত করে। তাই সহজলভ্য এবং সস্তা উপাদান দিয়ে সুষম খাবারের অভ্যাস তৈরি করুন এবং সুস্থ জীবনযাপন করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top