গর্ভাবস্থার সময় অনেক নারী পা ব্যথা বা অস্বস্তির সম্মুখীন হন। গর্ভাবস্থার বিভিন্ন পর্যায়ে শরীরের পরিবর্তন এবং হরমোনজনিত পরিবর্তনের কারণে পায়ে ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে পায়ের ব্যথা আরও তীব্র হতে পারে। এটি সাধারণত গুরুতর কিছু নয়, তবে এটি একজন নারীর দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি সৃষ্টি করতে পারে।
এখানে গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথার কারণ এবং এর প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
গর্ভাবস্থায় পা ব্যথার কারণসমূহ:
১. শরীরের ওজন বৃদ্ধি:
গর্ভাবস্থার সময় শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বাড়ে। বাচ্চার ওজনসহ অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তনের কারণে পায়ে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হতে পারে। বিশেষ করে পায়ের পেশী এবং জয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে পায়ে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক।
২. রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা:
গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথার আরেকটি সাধারণ কারণ হলো রক্ত সঞ্চালনের সমস্যা। গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির কারণে শিরা ও ধমনীতে চাপ পড়ে এবং রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা পায়ে ব্যথার কারণ হতে পারে। এর ফলে পায়ে ফোলাভাবও দেখা যায়।
৩. হরমোনজনিত পরিবর্তন:
গর্ভাবস্থায় শরীরে প্রোজেস্টেরন ও রিলাক্সিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা জয়েন্ট ও পেশিগুলোকে শিথিল করে। এই হরমোনগুলোর পরিবর্তন পায়ের পেশী ও জয়েন্টের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে ব্যথা অনুভূত হয়।
৪. ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি:
গর্ভাবস্থার সময় ভেনাস ইনসাফিসিয়েন্সি হতে পারে, যার কারণে শিরাগুলিতে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ফলে পায়ের নিচের দিকে রক্ত জমা হতে পারে এবং এটি পায়ে ব্যথা এবং ফোলাভাবের সৃষ্টি করে।
৫. পুষ্টির ঘাটতি:
গর্ভাবস্থায় অনেক সময় ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং অন্যান্য পুষ্টির ঘাটতির কারণে পায়ে ব্যথা হতে পারে। এই পুষ্টি উপাদানগুলো পেশীর কার্যকারিতা এবং স্নায়ুর সঠিক কাজের জন্য প্রয়োজনীয়।
পা ব্যথার প্রতিকার:
১. নিয়মিত পায়ের ব্যায়াম:
হালকা ব্যায়াম পায়ের পেশীকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং ব্যথা কমায়। বিশেষ করে পায়ের স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করলে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয় এবং পায়ের পেশীগুলো শক্তিশালী হয়।
২. পা উঁচু করে রাখুন:
পায়ে ব্যথা বা ফোলাভাব হলে পা উঁচু করে বসা বা শোয়ার চেষ্টা করুন। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সাহায্য করবে এবং ব্যথা কমাবে। দিনে কয়েকবার পায়ের নিচে বালিশ দিয়ে উঁচু করে বিশ্রাম নিন।
৩. পানি পান করুন:
গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। এটি শরীরে রক্ত সঞ্চালন বজায় রাখতে সাহায্য করে এবং পেশীর ক্র্যাম্প ও ব্যথা কমাতে সহায়ক হয়।
৪. নিয়মিত বিশ্রাম নিন:
পায়ে চাপ কমাতে গর্ভাবস্থায় নিয়মিত বিশ্রাম নেওয়া প্রয়োজন। অতিরিক্ত কাজ বা দাঁড়িয়ে থাকা পায়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিশ্চিত করা জরুরি।
৫. পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:
গর্ভাবস্থায় পুষ্টির ঘাটতি থাকলে পায়ে ব্যথা হতে পারে। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার খেলে পায়ের ব্যথা কমবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শাকসবজি, ফল এবং দুগ্ধজাত খাবার রাখা উচিত।
৬. আরামদায়ক জুতো ব্যবহার করুন:
গর্ভাবস্থায় হিলযুক্ত বা শক্ত জুতো পরা এড়িয়ে চলুন। আরামদায়ক, নরম এবং সমর্থন দেয় এমন জুতো ব্যবহার করুন যা পায়ের ওপর চাপ কমাতে সহায়ক হবে।
৭. গরম পানি দিয়ে সেঁক দিন:
পায়ে ব্যথা কমাতে গরম পানি দিয়ে সেঁক দিতে পারেন। গরম সেঁক পেশী শিথিল করে এবং ব্যথা প্রশমিত করতে সাহায্য করে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:
- যদি পায়ের ব্যথা অনেকদিন স্থায়ী হয়।
- যদি পায়ে অত্যধিক ফোলাভাব দেখা দেয়।
- পায়ে ব্যথার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট বা বুকে চাপ অনুভূত হয়।
- পায়ের ত্বক লালচে বা গরম হয়ে যায়।
গর্ভাবস্থায় পায়ে ব্যথা সাধারণত শারীরিক পরিবর্তন এবং হরমোনজনিত কারণে হয়। তবে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ নিয়ে এই ব্যথা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পায়ের ব্যায়াম, পর্যাপ্ত বিশ্রাম, এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার মাধ্যমে পায়ের ব্যথা কমানো সম্ভব। তবে যদি ব্যথা অতিরিক্ত হয় বা অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।