পেটের দুই পাশে ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এই ব্যথা কখনো কখনো স্বল্প সময়ের জন্য হয়, আবার কখনো দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। পেটের দুই পাশে ব্যথার মূল কারণ নির্ভর করে কোথায় ব্যথা হচ্ছে এবং ব্যথার প্রকৃতি কেমন। এর পেছনে অনেকগুলি শারীরিক সমস্যা বা রোগ থাকতে পারে, তাই ব্যথার ধরন বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
এখানে পেটের দুই পাশে ব্যথার কিছু সাধারণ কারণ এবং তার প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পেটের দুই পাশে ব্যথার সম্ভাব্য কারণসমূহ:
১. কিডনির পাথর:
কিডনির পাথর বা স্টোন হলে পেটের দুই পাশে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা সাধারণত পিঠের নিচে থেকে শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে সামনের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিডনির পাথরের কারণে প্রস্রাব করতে সমস্যা হতে পারে, এবং প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিতে পারে।
২. অ্যাপেন্ডিসাইটিস:
অ্যাপেন্ডিসাইটিস একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা যা পেটের ডান পাশে তীব্র ব্যথার কারণ হতে পারে। তবে পেটের বাম পাশেও ব্যথা হতে পারে যদি অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে পেটের ফোলা দেখা যায়। এতে জ্বর এবং বমি বমি ভাবও হতে পারে।
৩. ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS):
ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম একটি দীর্ঘস্থায়ী পেটের সমস্যা যা পেটের দুই পাশেই ব্যথার সৃষ্টি করতে পারে। এর সঙ্গে পেট ফাঁপা, গ্যাসের সমস্যা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও থাকতে পারে।
৪. অতিরিক্ত গ্যাস:
অতিরিক্ত গ্যাসের সমস্যা হলে পেটের দুই পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। গ্যাসের কারণে পেট ফেঁপে যায় এবং অস্বস্তি দেখা দেয়। এটি সাধারণত বেশি ফাস্টফুড বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার কারণে হতে পারে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য:
পেটে গ্যাস জমে এবং পেটের দুই পাশে ব্যথা হতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে। দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে এটি ক্রনিক ব্যথায় রূপ নিতে পারে।
৬. ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ (IBD):
ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজ বা অন্ত্রের প্রদাহজনিত রোগ হলে পেটের দুই পাশে তীব্র ব্যথা হতে পারে। এটি পেটের ভেতরের ঝিল্লিতে প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার কারণ হতে পারে।
৭. গর্ভাবস্থা:
গর্ভাবস্থার সময় পেটের দুই পাশে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে গর্ভের শেষ দিকে। বাচ্চার বৃদ্ধির কারণে পেটের পেশিতে চাপ পড়ে এবং ব্যথা হয়। এছাড়া প্রথম দিকে পেটের ব্যথা দেখা দিলে তা গর্ভপাতের লক্ষণ হতে পারে।
৮. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI):
মূত্রনালির সংক্রমণ হলে পেটের দুই পাশে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। UTI এর কারণে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন, এবং পেটের নিচের অংশে চাপ অনুভূত হয়।
পেটের দুই পাশের ব্যথার প্রতিকার:
১. প্রচুর পানি পান করুন:
যদি কিডনির পাথরের কারণে ব্যথা হয়, তাহলে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে তা প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যেতে পারে।
২. গরম সেঁক:
পেটের ব্যথার সময় গরম পানির বোতল দিয়ে সেঁক দিলে আরাম পাওয়া যায়। এটি পেশির টান কমাতে সাহায্য করে এবং ব্যথা প্রশমিত করে।
৩. ডাক্তারের পরামর্শ নিন:
যদি ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং অন্যান্য উপসর্গ যেমন জ্বর, বমি বা প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়।
৪. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান:
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। ফল, শাকসবজি, এবং দানাশস্য খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং পেটের ব্যথা কমে।
৫. পেটের ব্যায়াম করুন:
গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে ব্যথা হলে হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। এটি পেটের পেশিগুলিকে শিথিল করে এবং গ্যাস নির্গমনের সাহায্য করে।
পেটের দুই পাশে ব্যথার কারণ হতে পারে কিডনির পাথর, গ্যাসের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোমের মতো বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা। প্রাথমিক কিছু ব্যবস্থা নিয়ে এই ব্যথা কমানো সম্ভব, তবে দীর্ঘস্থায়ী বা তীব্র ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। পেটের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।