গর্ভাবস্থায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কিছুটা কমে যায়, তাই মায়েদের জ্বর বা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। জ্বর হলে এটি মায়ের শরীরের পাশাপাশি গর্ভস্থ শিশুর উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে তৎক্ষণাৎ সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এই পোস্টে আমরা গর্ভাবস্থায় জ্বরের সম্ভাব্য কারণ, লক্ষণ এবং কীভাবে এটি মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
গর্ভাবস্থায় জ্বরের কারণ:
১. ভাইরাসজনিত সংক্রমণ:
সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লুর মতো সংক্রমণ থেকে জ্বর হতে পারে, যা ভাইরাসের কারণে হয়। যদিও এই ধরনের সংক্রমণ সাধারণত কম বিপজ্জনক, তবে গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত সতর্কতা নেওয়া উচিত।
২. ইনফ্লুয়েঞ্জা (Influenza):
ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লু গর্ভাবস্থায় মারাত্মক হতে পারে। উচ্চ জ্বর এবং শরীর ব্যাথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়। ফ্লু হলে অবশ্যই ডাক্তারি পরামর্শ নিতে হবে।
৩. মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI):
গর্ভাবস্থায় মূত্রনালির সংক্রমণ একটি সাধারণ সমস্যা। এর ফলে জ্বর হতে পারে এবং সাথে সাথে প্রস্রাবে জ্বালা, পেটের নিচের অংশে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে।
৪. বায়বাহিত সংক্রমণ:
ধুলা-বালির কারণে বায়বাহিত জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বর হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় জ্বরের লক্ষণ:
- শরীরের তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি।
- তীব্র মাথাব্যথা।
- ঠান্ডা বা কাঁপুনি অনুভব করা।
- শরীরে ব্যথা বা দুর্বলতা।
- কাশি বা গলা ব্যথা।
করণীয়:
১. ডাক্তারি পরামর্শ নিন:
গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের জ্বর হলে, প্রথমে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সাধারণ জ্বর হলেও নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়, কারণ কিছু ওষুধ শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
২. প্রচুর পানি পান করুন:
শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপ বের করতে এবং ডিহাইড্রেশন রোধে বেশি করে পানি পান করা উচিত। এছাড়া ফলের রস বা গরম স্যুপও উপকারী হতে পারে।
৩. তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
যদি তাপমাত্রা বেশি হয় তবে ঠান্ডা কাপড় দিয়ে মাথা মুছুন। বাচ্চাদের জন্য যেসব ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল নিরাপদ, তা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা যেতে পারে।
৪. বিশ্রাম নিন:
জ্বর হলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাই পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। বিশ্রামের ফলে শরীর দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারে।
৫. হালকা খাবার খান:
জ্বরের সময় হালকা ও সহজপাচ্য খাবার যেমন স্যুপ, ফল, সবজি খাওয়া ভালো। এটি শরীরকে পুষ্টি জোগাবে এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ প্রয়োজন:
- যদি জ্বর ১০০.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি হয়।
- জ্বরের সাথে তীব্র মাথাব্যথা বা শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
- গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় বা তৃতীয় ত্রৈমাসিকের সময় জ্বর দেখা দিলে।
- শরীরে র্যাশ বা চুলকানি হয়।
- মূত্রনালীতে সংক্রমণের লক্ষণ থাকে, যেমন প্রস্রাবে জ্বালা বা রক্ত দেখা যায়।
গর্ভাবস্থায় জ্বর প্রতিরোধের উপায়:
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
- জীবাণুমুক্ত পরিবেশে থাকা এবং হাত সবসময় পরিষ্কার রাখা।
- প্রচুর পানি পান করা, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
- ঠান্ডা আবহাওয়ায় উষ্ণ পোশাক পরা এবং ফ্লু প্রতিরোধী টিকা নেওয়া।
গর্ভাবস্থায় জ্বর হওয়া একটি সাধারণ বিষয় হলেও, মায়ের এবং শিশুর সুরক্ষার জন্য সতর্ক হওয়া আবশ্যক। যথাযথ চিকিৎসা এবং সঠিক যত্নের মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় জ্বর মোকাবিলা করা সম্ভব। তাই, গর্ভাবস্থায় কোনো ধরনের জ্বর বা সংক্রমণ দেখা দিলে, অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
📌 ঠিকানা:
পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।