হৃদরোগ এবং রক্তনালীর রোগ (কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ) বর্তমানে একটি বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, এবং হৃদযন্ত্রের অক্ষমতা হতে পারে। কিন্তু, সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের মাধ্যমে হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।
হৃদরোগের কারণসমূহ:
হৃদরোগের মূল কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- উচ্চ রক্তচাপ: দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপ বেড়ে গেলে হৃদপিণ্ডের রক্তনালীগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- উচ্চ কোলেস্টেরল: অতিরিক্ত কোলেস্টেরল রক্তনালীগুলোতে জমে গিয়ে ব্লক সৃষ্টি করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- ধূমপান: ধূমপানের কারণে রক্তনালী সরু হয়, রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয়, যা হৃদযন্ত্রকে দুর্বল করে।
- ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি।
- মেদ ও অতিরিক্ত ওজন: অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্রের উপর বাড়তি চাপ ফেলে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
- অব্যবস্থাপনা বা অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস: ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত লবণ ও চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া হৃদরোগের অন্যতম কারণ।
- মানসিক চাপ ও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা: দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা হৃদযন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত করতে পারে।
- ব্যায়ামের অভাব: নিয়মিত ব্যায়ামের অভাবে রক্তনালীগুলো দুর্বল হয়ে যায়, যা হৃদরোগের কারণ হতে পারে।
হৃদরোগের লক্ষণ:
হৃদরোগের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ নিম্নরূপ:
- বুকের মাঝখানে চাপ বা ব্যথা।
- শ্বাসকষ্ট।
- হাত, ঘাড়, বা পিঠে ব্যথা।
- অস্বাভাবিকভাবে ঘাম হওয়া।
- মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা।
রক্তনালীর রোগের কারণ:
রক্তনালীর রোগ রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এর প্রধান কারণগুলো:
- অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস: রক্তনালীগুলোর দেয়ালে কোলেস্টেরল ও ফ্যাট জমে ব্লক তৈরি হওয়া।
- জেনেটিক সমস্যা: কিছু ক্ষেত্রে পারিবারিক ইতিহাস রক্তনালীর রোগের কারণ হতে পারে।
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন: অতিরিক্ত মদ্যপান রক্তনালীর ক্ষতি করে এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ প্রতিরোধের উপায়:
সুস্থ হৃদযন্ত্র ও রক্তনালী রক্ষার জন্য কিছু পরামর্শ রয়েছে যা মেনে চললে হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস:
- কম ফ্যাট ও কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার গ্রহণ করুন।
- প্রতিদিন শাকসবজি, ফলমূল ও আঁশযুক্ত খাবার খান।
- অতিরিক্ত লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলুন।
- মাছ, বাদাম ও স্বাস্থ্যকর তেল (যেমন অলিভ অয়েল) খাওয়ার পরিমাণ বাড়ান।
২. নিয়মিত ব্যায়াম:
- প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন, যেমন হাঁটা, সাঁতার কাটা, বা যোগব্যায়াম।
- এর মাধ্যমে রক্তচাপ ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।
৩. ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন:
- ধূমপান ও তামাকজাত পণ্য সম্পূর্ণরূপে ত্যাগ করুন।
- অ্যালকোহল সেবন থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি রক্তচাপ বাড়ায়।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা:
- নিজের বডি মাস ইনডেক্স (BMI) নিয়ন্ত্রণে রাখুন। অতিরিক্ত ওজন হৃদযন্ত্রের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
৫. মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ:
- স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা শ্বাসের ব্যায়াম করুন।
- পর্যাপ্ত নিদ্রা নিন, কারণ সঠিক ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৬. রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করুন:
- উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল নিয়মিত পরীক্ষা করুন। যদি এগুলো বেশি থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করুন।
হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ প্রতিরোধ সম্ভব, যদি আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ করতে পারি। সুস্থ জীবনযাপনের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখা যায় এবং দীর্ঘায়ু লাভ করা সম্ভব। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.