কিডনি আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ এবং অতিরিক্ত পানি বের করে দিয়ে রক্ত পরিষ্কার রাখে। কিন্তু কিডনি যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা এর কার্যক্ষমতা হারায়, তখন এটি শরীরের জন্য মারাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে। কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো শনাক্ত করা গেলে, সময়মতো চিকিৎসা নিয়ে কিডনির কার্যক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব।
এখানে কিডনি রোগের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পূর্বলক্ষণ তুলে ধরা হলো:
কিডনি রোগের গুরুত্বপূর্ণ পূর্বলক্ষণ:
১. প্রস্রাবের পরিবর্তন:
প্রস্রাবের পরিমাণ, রঙ এবং ঘনত্বের পরিবর্তন কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। যেমন:
- অস্বাভাবিকভাবে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া বা বেশি হওয়া।
- প্রস্রাবে ফেনা বা বুদবুদ দেখা।
- প্রস্রাবের সাথে রক্ত মিশে যাওয়া।
- খুব বেশি বা খুব কম প্রস্রাব হওয়ার মতো সমস্যাগুলি কিডনি সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
২. ক্লান্তি ও দুর্বলতা:
কিডনি রক্ত থেকে বর্জ্য এবং অতিরিক্ত তরল বের করতে পারে না, ফলে শরীর বিষাক্ত পদার্থে ভরে যায়। এই কারণে মানুষ খুব দ্রুত ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করতে পারে। এছাড়া কিডনির সমস্যার কারণে এনিমিয়া দেখা দিতে পারে, যা শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি করে।
৩. মুখমণ্ডল ও পায়ের ফোলা:
কিডনি যখন সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শরীরে অতিরিক্ত পানি জমতে শুরু করে। এর ফলে মুখমণ্ডল, পা, হাত ও পায়ের গোড়ালি ফুলে যায়। এই ফোলাভাব সাধারণত সকালে বেশি দেখা যায়।
৪. পেট, কোমর ও পিঠে ব্যথা:
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে অনেক সময় কোমর, পিঠ, অথবা পেটের একপাশে ব্যথা হতে পারে। কিডনি স্টোন বা কিডনি ইনফেকশন এর কারণ হতে পারে।
৫. ত্বকের সমস্যা ও চুলকানি:
কিডনি শরীর থেকে টক্সিনগুলো বের করতে না পারলে শরীরে বর্জ্য পদার্থ জমে যায়, যা ত্বকে চুলকানি, শুষ্ক ত্বক, এবং ত্বকের ফাটল তৈরি করতে পারে।
৬. ক্ষুধামন্দা ও ওজন কমে যাওয়া:
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে ক্ষুধামন্দা, খাবারে অরুচি এবং ওজন কমে যাওয়া অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগ থাকলে এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণে সমস্যা তৈরি করে, ফলে ওজন হ্রাস পায়।
৭. শ্বাসকষ্ট:
কিডনি যখন শরীর থেকে তরল বের করতে পারে না, তখন ফুসফুসে পানি জমে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়া, কিডনি সমস্যার কারণে রক্তে অক্সিজেনের অভাব তৈরি হয়, যার ফলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে।
৮. উচ্চ রক্তচাপ:
কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হলে শরীরে সোডিয়াম ও পানি জমা হয়, যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ কিডনির কার্যক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে এবং পরবর্তীতে কিডনি ফেইলিওরের ঝুঁকি বাড়ায়।
৯. মেটালিক স্বাদ ও মুখে দুর্গন্ধ:
কিডনি যদি বর্জ্য ঠিকমতো শরীর থেকে বের করতে না পারে, তবে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যায়। এর ফলে মুখে ধাতব স্বাদ আসতে পারে এবং মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে।
১০. ঘুমের সমস্যা:
কিডনি রোগীদের প্রায়ই ঘুমের সমস্যা হয়। শরীরে টক্সিন জমা হলে এটি মস্তিষ্কের উপর প্রভাব ফেলে এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
কিডনি রোগের ঝুঁকি:
কিছু বিষয় কিডনি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন:
- ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ।
- পানি কম পান করা এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল গ্রহণ।
- পরিবারে কিডনি রোগের ইতিহাস থাকা।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে করণীয়:
- পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে, যেন শরীর থেকে বর্জ্য ঠিকভাবে বের হয়।
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রচুর ফলমূল ও সবজি থাকবে।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
- প্রস্রাবের সমস্যার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো অনেক সময় সাধারণ অসুস্থতার মতো মনে হতে পারে, তাই লক্ষণগুলো অবহেলা করা উচিত নয়। যদি আপনি উপরের কোনো লক্ষণ লক্ষ্য করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.