বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর যুগে কম্পিউটারের সামনে এক নাগাড়ে কাজ করা এক সাধারণ বিষয়। অফিসের কাজ হোক কিংবা ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং, অনেকেই দিনের অনেকটা সময় কম্পিউটারের সামনে কাটিয়ে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে একটানা কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করা শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো জানার পাশাপাশি সেগুলো থেকে বাঁচার উপায়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরি।
কম্পিউটারের সামনে এক নাগাড়ে বসে কাজ করার ক্ষতিসমূহ:
১. ঘাড় ও কোমর ব্যথা:
দীর্ঘ সময় ধরে একই অবস্থানে বসে থাকলে ঘাড় ও কোমরের ওপর চাপ পড়ে, যার ফলে ঘাড়-কোমর ব্যথা ও পিঠে ব্যথা দেখা দেয়। এছাড়াও ভুল ভঙ্গিতে বসার ফলে শরীরের ভারসাম্য হারায় এবং মেরুদণ্ডের ক্ষতি হতে পারে।
২. চোখের ওপর চাপ (Computer Vision Syndrome):
একটানা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, যাকে “কম্পিউটার ভিশন সিনড্রোম” বলা হয়। এতে চোখে শুষ্কতা, ঝাপসা দেখা, চোখ ব্যথা, মাথা ব্যথা এবং চোখের লালচে ভাব দেখা দিতে পারে।
৩. হাত ও কব্জির সমস্যাঃ
দীর্ঘসময় ধরে টাইপিং করলে কব্জি, আঙুল ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে। এই অবস্থা “কার্পাল টানেল সিনড্রোম” নামে পরিচিত, যা টাইপিংয়ের ফলে সৃষ্ট একটি সাধারণ সমস্যা।
৪. মানসিক চাপ:
একটানা দীর্ঘসময় কাজ করলে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বাড়তে পারে। কর্মস্থলের চাপ এবং কম্পিউটারের দীর্ঘ সময়ের ব্যবহার মানসিক অবসাদ এবং ক্লান্তির সৃষ্টি করে।
৫. স্থূলতা:
দীর্ঘ সময় ধরে বসে কাজ করলে শরীরের শক্তি ক্ষয় কম হয়, যা ধীরে ধীরে স্থূলতার দিকে নিয়ে যায়। এছাড়াও শারীরিক সক্রিয়তা কম থাকলে মেটাবলিজমের হার কমে যায়, যা মেদ জমার ঝুঁকি বাড়ায়।
৬. রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি:
একটানা বসে কাজ করার ফলে রক্তচাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। শরীরে সঞ্চালন ব্যাহত হলে শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি থাকে এবং হৃদযন্ত্রের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে।
একটানা বসে কাজ করার প্রতিকার ও করণীয়:
১. প্রতি ঘণ্টায় বিরতি নিন:
প্রতি এক ঘণ্টা কাজের পর পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বিরতি নিন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে কিছু হাঁটুন, শরীরকে প্রসারিত করুন বা চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম দিন। এটি শরীরের সঞ্চালন ও মাংসপেশির ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।
২. সঠিক আসনে বসুন:
কম্পিউটারে কাজ করার সময় সঠিক ভঙ্গিতে বসা অত্যন্ত জরুরি। আপনার কম্পিউটারের মনিটর চোখের সমান্তরালে রাখুন, চেয়ার এমনভাবে ব্যবহার করুন যাতে মেরুদণ্ড সোজা থাকে। পায়ের নিচে একটি ছোট স্টুল রাখুন যাতে তা মাটিতে সমানভাবে থাকে।
৩. চোখের যত্ন নিন:
স্ক্রিনে তাকানোর সময় প্রতি ২০ মিনিট পর পর চোখ সরিয়ে ২০ সেকেন্ডের জন্য দূরে কোনও কিছুর দিকে তাকান। এছাড়াও চোখের শুষ্কতা দূর করতে মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ রাখুন এবং প্রয়োজনে চোখের ড্রপ ব্যবহার করুন।
৪. ব্যায়াম করুন:
নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম বা হালকা শরীরচর্চা করতে পারেন। এটি শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কর্মক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়ক।
৫. সঠিক খাদ্যাভ্যাস:
শরীর সুস্থ রাখতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট রাখুন। প্রচুর পানি পান করুন এবং ক্যাফেইন ও ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন।
৬. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট:
মানসিক চাপ কমানোর জন্য মনোযোগ ব্যায়াম (মেডিটেশন) ও শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়মিত অভ্যাস করুন। এটি মানসিক চাপ কমিয়ে কাজের ফোকাস বাড়াতে সহায়ক।
কম্পিউটারের সামনে একটানা বসে কাজ করার ফলে শরীর ও মন উভয়ের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তাই সঠিক ভঙ্গি, নিয়মিত বিরতি, শারীরিক ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। কম্পিউটারের কাজের জন্য শরীরের যত্ন নেওয়া অপরিহার্য।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.