বর্ষাকাল সবসময়ই নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে আসে। বিশেষত যাঁরা ডায়াবেটিসের রোগী, তাঁদের জন্য এই সময়টা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিকভাবে শরীরের যত্ন না নিলে এই মৌসুমে ডায়াবেটিসের রোগীরা সংক্রমণ, শারীরিক অসুস্থতা, ও অন্যান্য জটিলতায় ভুগতে পারেন। তাই এই সময় ডায়াবেটিস রোগীদের কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
বর্ষাকালে ডায়াবেটিস রোগীদের যেসব ঝুঁকি থাকে:
১. সংক্রমণের ঝুঁকি:
বর্ষাকালে হিউমিডিটির মাত্রা বেশি থাকে, যা ত্বক সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, ফলে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি আরও বেশি থাকে। বিশেষ করে পায়ের যত্ন না নিলে ফাংগাল ইনফেকশন বা পায়ের আলসার দেখা দিতে পারে।
২. পানির অভাব (ডিহাইড্রেশন):
বর্ষাকালে বেশিরভাগ মানুষ কম পানি পান করেন, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, এবং এতে শারীরিক দুর্বলতা, মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বাড়তে পারে।
৩. স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার প্রভাব:
আর্দ্র আবহাওয়ার কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের পা ও অন্যান্য অঙ্গের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে পায়ের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় ফাঙ্গাল ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে, যা গুরুতর ক্ষতির কারণ হতে পারে।
৪. খাবারদাবারে অসতর্কতা:
বর্ষাকালে নানা ধরনের তেলেভাজা খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু এসব খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর, কারণ এতে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বর্ষাকালে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বাড়তি সতর্কতা:
১. পায়ের যত্ন:
বর্ষাকালে পা সবসময় পরিষ্কার ও শুকনা রাখা জরুরি। প্রতিদিন পা ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন এড়াতে প্রয়োজনীয় ক্রিম ব্যবহার করুন। স্যাঁতসেঁতে জুতো এড়িয়ে চলুন এবং সঠিক ফিটিংয়ের শুকনো জুতো ব্যবহার করুন।
২. প্রচুর পানি পান করুন:
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা অত্যন্ত জরুরি। বর্ষাকালে পানির অভাব দেখা দিতে পারে, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাই দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে, যাতে শরীর হাইড্রেটেড থাকে।
৩. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন:
বর্ষাকালে শারীরিক সক্রিয়তা কমে যায়, ফলে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।
৪. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া:
ফাস্টফুড, তেলেভাজা খাবার ও অতিরিক্ত মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। বর্ষাকালে সহজপাচ্য, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। শাকসবজি, ফলমূল ও প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করে সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
৫. সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা:
সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পেতে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি। হাত ধোয়া, পরিষ্কার কাপড় পরা, এবং জীবাণুনাশক ব্যবহার করা উচিত। বৃষ্টি ভেজা থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখুন এবং স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ এড়িয়ে চলুন।
৬. প্রচুর বিশ্রাম নিন:
বর্ষাকালে আবহাওয়ার কারণে শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই শরীরের শক্তি বজায় রাখতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। রাতে ভালো ঘুম এবং দিনে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিলে শরীরের ইমিউন সিস্টেম ভালো থাকবে।
বর্ষাকালে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু বাড়তি সতর্কতা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে পায়ের যত্ন, পানি পান, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এইসব সতর্কতা মেনে চললে বর্ষাকালে ডায়াবেটিস রোগীরা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করতে সক্ষম হবেন।
ঠিকানা: পাইনেল মেন্টাল হেলথ কেয়ার সেন্টার, ২২২/১বি, সাউথ পীরেরবাগ, মিরপুর-২, ঢাকা -১২১৬।
ফোন: ০১৬৮১০০৬৭২৬.